গৌরনদী
গৌরনদীতে পালকপুত্রকে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের মিয়ারচার গ্রামে পালক পুত্রকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যায় সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সাবেক স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম (৩০)। পুলিশ বুধবার শিশু তানজিমুলের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেরেই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেছে। এ ঘটনায় বুধবার থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
স্থানীয় লোকজন, পালক শিমুপুত্রের মায়ের অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মিয়ারচর গ্রামের মজিবর চৌকিদারের পুত্র এনামুল চৌকিদার (৪৪) ফাশ্ববর্তি বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ঠাকুর মুল্লিক গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন চৌকিদারের কন্যা ফেরদৌসী বেগমকে সামাজিকভাবে বিয়ে করে । বিয়ের পরে তাদের কোন সন্তান না হওয়ায় স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম ২০১৫ সালে তানজিমুল হক নামে এক নবজাতককে দত্তক এনে নিজেদের সন্তান হিসেবে পালন পালন শুরু করেন। গত ৪/৫ মাস আগে এনামুল চৌকিদার গোপনে একটি বিয়ে করেন। বিয়ের খবর প্রথম স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম জানার পর থেকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। ফেরদৌসী বেগম জানান, তার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে কলহের চরম পর্যায়ে পৌছলে গত ১৫ জুলাই উভয়ের অভিভাবক পর্যায়ে সমঝোতা বৈঠকে এনামুল চৌকিদার স্ত্রী ফেরদৌসিকে দেন মোহর বাবদ নগদ দুই লক্ষ টাকা দিয়ে তালাক দেন। তখন স্বামী এনামুল চৌকিদার স্ত্রী ফেরদৌসীর কাছ থেকে পালকপুত্র তানজিমুলকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। মঙ্গলবার দুপুরে মিয়ারচর বাড়ির পাশের একটি ডোবায় শিশুর লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসি।
ফেরদৌসী বেগম অভিযোগ করে বলেন, শিশু তানজিমুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি সাবেক স্বামীর বাড়িতে যাই, গিয়ে মৃত শিশুর মুখে দুধভাত দেখতে পাই এবং মুখ থেকে পয়োজনের গন্ধ বের হয়েছে। আমার সন্তানকে ও (সাবেক স্বামী এনামুল) খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ডোবায় ফেলে রেখে পানিতে পড়ে মারা গেছে বলে প্রচারনা চালায়। পানিতে পড়ে মারা যাওয়ার কোন লক্ষন তানজিমুলের দেহে ছিল নাই। আসলে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে ঘরে তোলার আগেই পালক পুত্রকে তানজিমুলকে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছে।
শরিকল ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাইরুল ইসলাম বলেন, আমি জানতাম ছেলেটি এনামুল-ফেরদেসৈীর কিছুদিন পূর্বে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিয়েছে। তখন জানতে পারি শিশুটি তারা হাসপাতাল তেকে দত্তক নিয়েছে পালন করেছেন । শিশুটির মৃত্যুর খবর পেয়ে গিয়ে দেখেছি তাতে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কোন লক্ষন ছিল না। যে ডোবায় লাশ পাওয়া গেছে সেই ডোবার পানি উচ্চতা খুবই কম। ওই পানিতে পড়ে কোন শিশু মারা যেতে পারে না। কর্দমাক্ত পানিতে পড়ে মারা গেলে শিশুর হাতে-পায়ে কাদা থাকত-তাও ছিল না। ধারনা করা হচ্ছে শিশুটিতে হত্যা করে ডোবায় ফেলা হয়ে থাকবে পারে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এনামুল হক বলেন, তানজিমুল খেলার ছলে ডোবায় পড়ে মারা গেছে। গৌরনদী মডের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে সুরাতহাল শেষে ময়না জন্য তদন্তের বুধবার মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহীন বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে ময়না তদন্তের পরেই রিপোর্ট মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।