গৌরনদী
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের ২৮নং বাহেরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা হওয়ায় পরেও গত ৮ বছর ধরে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদানের চলছে। পরিত্যক্ত ভবনের বাহিরে একটি বাড়ির মধ্যে নোংরা পরিবেশে জীর্নশীর্ন পরিত্যক্ত টিনের ঘরে পাঠদান চলে প্রথম শ্রেনীর শিশুদের পাঠদান। শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা না থাকায় পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পরে অভিভাবকরা। বিষয়টি অবহিত করে গত ২৩ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণ-শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের ২৮ বাহেরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন কক্ষ বিশিষ্ট পরিত্যাক্ত ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভবনটির প্রতিটি পিলারে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ভবনের সামনের অংশ বিম ভেঙ্গে ঝরে পড়ছে। দীর্ঘদিনে সংস্কার না হওয়ায় ভবনটির অনেক অংশই ধসে পড়েছে। ভবনের ভিতরে ঢুকে অবস্থা দেখে আতংকিত না হয়ে উপায় নেই। কেননা একটি বিল্ডিং এর ছাদ থাকে ভীমের উপর ভর করে। এই ভীমের যা করুন দশা। অধিকাংশ ভীমের আস্তর খসে পরে রডগুলো বের হয়ে গেছে। যে কোন সময় ভবনটি ধসে পড়ার অবস্থা। তিন কক্ষের ১টিতে অফিস কার্যক্রম চলে বাকি দুটি পাঠদান চলছে। ৩ম শ্রেণরি পাঠদান কক্ষে দেখা গেছে বিমের ও ছাদের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে পড়ছে। দ্বিতীয় শ্রেনীর পাঠকক্ষের অবস্থা আরো নাজুক। স্কুল প্রাচীরের বাহিরে একটি বাড়ির মধ্যে নোংরা পরিবেশে জীর্ন শীর্ন একটি পরিত্যক্ত দোচালা টিনের ঘরে পাঠদান চলে প্রথম শ্রেনীর শিশুদের ।
এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অবিভাবকরা জানান, বর্তমানে পরিত্যক্ত ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। যে কোন সময় প্রানহানির মত দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। গত ২৩ জানুয়ারি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও স্থানীয় অভিভাবকদের নিয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরিত্যক্ত ঝুকিপূর্ন ভবনে পাঠদানের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করনের সিদ্বান্ত হয়। তার প্রেক্ষিতে ওই সভার রেজুলেশনসহ বিষয়টি জানিয়ে প্রাথমিক ও গণ-শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে লিখিতভাবে আাবেদন করা হয়। ৫ম শিক্ষার্থী মেহজামিন রহমান, মিনহাজুল আরেফিন বলে, স্যার এইহানে বইয়া লেহাপড়া করতে মোরা ভয় পাই। ছাদ ভাইঙ্গা মোগো গায়ে পড়ে-মোরা আহত অই। স্থানীয় অভিভাবক মোঃ সেলিম সিকদার, শাহনাজ পারভীন বলেন, পরিত্যক্ত ভবনে ক্লাস নেওয়া হয়, আমরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাই এবং স্কুলে পাঠালেও অজানা আতংকে থাকি কখন যেন কি হয়?
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ জিয়াউল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নির্মিত ভবনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ন হওয়ায় বিগত ৮ বছর পূর্বে ২০১৫ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেন উপজেলা শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। পরিত্যাক্ত ঘোষনা হওয়ার পরেও পাঠদানের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ওই পরিত্যাক্ত ভবনই পরবর্তি ৮ বছর পাঠদান করা হয়। কিন্তু ভবনটির বেহাল অবস্থা দেখে কোমলমতি শিশুদের প্রানহানীর আশংকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পান।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ মোজাম্মেল সিকদার জানান, বরিশালের প্রত্যন্ত পল্লির বিল হিসেবে পরিচিত উজিরপুর উপজেলার অজপাড়া গাঁয়ের হতদরিদ্র সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম বাহেরঘাট। ১৯৪০ সালে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪-১৯৯৫ ইং অর্থবছরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা পাকা ভবন নির্মান করা হয়। বিদ্যালয় ভবনটি প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পার হলেও তা সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১৮১ জন ছিাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে আসছে। বিদ্যালয়টি পরিত্যাক্ত ঘোষনা হওয়ার পরেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস নেয়া হয়। ফলে ভবনের বিম ও ছাদের পলেস্তার ভেঙ্গে পড়ে প্রতিনিয়ত আহত হওয়ার ঘটণা ঘট। তিনি আরো বলেন, উজিরপুরের বিল হিসেবে পরিচিত অজপাড়া গায়ের হতদরিদ্র এলাকা হওয়ার কারনে বিদ্যালয়টি অবহেলিত এবং কেউই খোজঁখবর রাখেন না। আমাদের সমস্যার কথা বার বার জানানো হলেও কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাসলিমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকরা বিষয়টি লিখিতভাবে আমাকে অবহিত করেছে। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও সহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি দ্রæততম সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে।