গৌরনদী
শিশুর কান্না শুনে মায়ের লাশ উদ্ধার,স্বামী ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী- গোপালগঞ্জ সড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল বাইপাশ সড়কের সেতুর পাশের এলাকায় রাত দেড়টার দিকে দশ মাসের একটি শিশুকান্না করছিল। শিশুর কান্না শুনে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে পাশেই মায়ের লাশ দেখতে পান । চাঞ্চল্যকর রাশিদা হত্যা মামলায় স্বামী ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে বুধবার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাজাহারুল ইসলাম।
রাশিদা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাজাহারুল ইসলাম জানান, হত্যাকান্ডের ৭ মাস পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযুক্তরা হল মামলার এজাহারভূক্ত আসামি নিহত রাশিদা বেগমের স্বামী গোপালগঞ্জ সদর থানার বেদগ্রামের (উত্তরপাড়া) মৃত আনোয়ার শেখের ছেলে তামিম শেখ (৪২), তার বন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারী ও সরাসরি হত্যাকান্ডে জড়িত গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার ঘাঘর এলাকার মৃত ইদ্রিস দাড়িয়ার ছেলে রুবেল খা (৪০) ও গোপালগঞ্জ সদর থানার দক্ষিণ বেদগ্রামের মৃত আ. সালাম শেখ এর ছেলে মো. জুলহাস শেখ (৪৭)। তদন্তকালে আসামিদের স্বীকারোক্তি ছাড়াও ৩২ জনের সাক্ষ গ্রহন করা হয়।
পুলিশ জানান, বরিশালের গৌরনদী- গোপালগঞ্জ সড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল বাইপাশ সড়কের সেতুর পাশের এলাকায় রাত দেড়টার দিকে প্রচন্ড শীতে দশ মাসের একটি শিশুকান্না করছিল। শিশুর কান্না শুনে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে শিশুর পাশেই মায়ের লাশ দেখতে পান । পরে পুলিশকে খবর দিলে ওই রাতেই পুলিশ লাশ ও শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরের দিন (২১ জানুয়ারি) এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আল আমিন বাদি হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান আসামি স্বামী তামিম শেখকে (৪২) গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করেছে স্বামী তামিম শেখ।
বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বেতগ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেন শেখের পুত্র তামিম শেখের (৪২) সঙ্গে তার ছোট বোন রাশিদা বেগমের (৩৫) বিয়ে হয়। ওই ঘরে তনিম নামের দশ মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তামিম শেখ তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গোপালগঞ্জ থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিদাকে নিয়ে আগৈলঝাড়া সদরের বাকাল গ্রামের বসবাস করতেন। ১৯ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় স্বামী তামিম শেখ স্ত্রী রাশিদা বেগমের মুঠোফোনে কল করে তাকে তাকে গোপালগঞ্জ যেতে বলে। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিছুটা বাক-বিতান্ডা হয়। পরে ওই দিন (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে গোপালগঞ্জ চলে যায়। সেখানে ২০ জানুয়ারি রাত একটার দিকে স্বামী ও তার বন্ধু রাশিদাকে কুপিয়ে হত্যা হত্যা করে মাহেন্দ্রাযোগে লাশ নিয়ে গৌরনদী- গোপালগঞ্জ সড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল বাইপাশ সড়কের সেতুর পাশে হান্নান মোল্লার মাছের ঘেরে এলাকায় লাশ ফেলে যায় স্বামী ও তার সহযোগীরা। পাশেই ফেলে যায় দশ মাসের ফুটফুটে পুত্র সন্তান তনিমকে। রাত দেড়টার দিকে শিশুটি কান্না করছিল। এ সময় স্থানীয়রা শিশুর কান্না শুনে ছুটে গিয়ে পাশেই এক নারীর লাশ দেখতে পান। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে ওই রাতেই আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।