গৌরনদী
গৌরনদীতে জামাই কর্তৃক শ্বশুরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের হোসনাবাদ বাজারে সোমবার জামাতা ও তার সহযোগীরা শ্বশুর হারুন মৃধাকে (৬০) পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার নিহতের বড় ছেলে মোঃ মিরাজ মৃধা (২৬) বাদি হয়ে ৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মঙ্গলবার বরিশাল মর্গে প্রেরন করেছে।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানান, বরিশালের মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবের চর গ্রামের খেয়াঘাটের মাঝি হারুন মৃধার (৬০) কন্যা ও গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী শান্তপা আক্তারের (১৫) এক বছর পূর্বে গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের সেকেম আলী বয়াতির পুত্র মাসুম বয়াতির (২৮) সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে কিছুদিন না যেতেই স্বামী মাসুম বয়াতি যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। শান্তপা হতদরিদ্র বাবার কাছ থেকে যৌতুক আনতে অস্বীকার করায় প্রতিনিয়ত তাকে শারীরিক নির্যাতন করত স্বামী মাসুম বয়াতি। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ১৬ মার্চ শান্তুপা স্বামী মাসুম বয়াতিকে তালাক দেয়। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ চলছিল।
নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫) অভিযোগ করেন, গত সোমবার মেয়ে শান্তপা স্কুল থেকে নিজ বাড়ি সাহেবের চর ফেরার পথে দুপুর দেড়টার দিকে হোসনাবাদ বাজারে পৌছলে পরিত্যক্ত স্বামী মাসুম বয়াতি (২৮) তার ছোট ভাই হান্নান বয়াতি (২৪)সহ ৪/৫ জন সহযোগী শান্তপার পথরোধ করে টানা হেচরা শুরু করেন। এক পর্যায়ে মেয়ে শান্তপাকে অপহরন করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় । এ সময় স্থানীয়রা শান্তপাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন এবং তার বাবা হারুন মৃধাকে হোসনাবাদ বাজারে আসতে বলেন। বাবা হারুন মৃধা খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে গৌরনদীর হোসনাবাদ বাজারে পৌছলে জামাতা মাসুম মৃধার নেতৃত্বে তার ছোট ভাই হান্নান বয়াতিসহ ৪/৫ জন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে পিটিয়ে গুরুতরভাবে আহত করে। স্বজনরা খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে গুরুতরভাবে আহত হারুন মৃধাকে উদ্ধার করে হোসনাবাদ নিউ জননী প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।
নিহতের ছোট ভাই স্বপন মৃধা (৪০) অভিযোগ করে বলেন, ভাতিজির স্বামী মাসুম ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকের জন্য আমার ভাতিজিকে অমানবিক নির্যাতন করে আসছিল। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত মাসে মাসুমকে তালাক দেয় শান্তপা। উভয়ের পাওনা দাওনা নিয়ে আজ বুধবার সালিস বৈঠকে বসার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই জামাতা ও তার আত্মীয় স্বজনরা আমার ভাইকে বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। অভিযোগের ব্যপারে জানতে মাসুম বয়াতির কাছে একাধিকবার কল করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গ্রামের লেঅকজন জানান, হারুন মৃধা নিহতের খবর পাওয়ার পরে মাসুম বয়াতি ও তার পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে নিহত হারুন মৃধার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গতকাল মঙ্গলবার বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হযেছে। একই দিন নিহতের বড় ছেলে মোঃ মিরাজ মৃধা বাদি হয়ে মাসুম বয়াতি (২৮) তার ছোট ভাই হান্নান বয়াতি (২৪) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দাযের করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশী তৎপরতা অব্যহত রয়েছে।