গৌরনদী
গৌরনদীতে স্কুল ছাত্রীকে অপহরন করে ধর্ষনের পর হত্যা, সাড়ে ৫ বছর পর বিমান বন্দরে প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী কবিতা আক্তারকে অপহরন করে ধর্ষন ও হত্যা করে লেবাননে আত্মগোপন করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি আজাদ হোসেন ওরফে কালু (৩০)। সাড়ে ৬ বছর পর দেশে ফিরে শাহ জালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে শনিবার গ্রেপ্তার হন। গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ সেখান গৌরনদী থানায় নিয়ে এসে রোববার আজাদ হোসেনকে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করেছে।
বিমান বন্দর থানা পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, শনিবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ঢাকা শাহ জালাল আর্ন্তজাতিক বিমান পৌছে গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী কবিতা আক্তারকে অপহরন করে ধর্ষন ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি আজাদ হোসেন। পূর্ব থেকেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় ইমিগ্রেশনে তাকে আটক করে বিমান বন্দর থানাকে অবহিত করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে গৌরনদী মডেল থানায় বার্তা প্রেরন করে। গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হক বলেন, বিমানবন্দর থানা পুলিশ কবিতা হত্যার মামলার প্রধান আসামি আজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আমাদের অবহিত করলে সেখান আসামিকে গৌরনদী নিয়ে এসে রোববার আদালতরে মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় করাগারে পাঠানো হয়।
এজাহার, বাদির ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেঠে, গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী মহল্লার মোঃ আইনুল হকের কন্যা ও উপজেলার টরকী বন্দর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী কবিতা আক্তারকে (১৪) একই উপজেলার ধানডোবা গ্রামের লাল মিয়া চকিদারের পুত্র আজাদ হোসেন ওরফে কালু (২৫) উত্যক্ত করে আসছিল। কালুর প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় কালু কবিতাকে অপহরনের হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে কবিতাকে একাধিকবার অপহরনের চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হন। অপহরনের চেষ্টার ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় একাধিক জিডি করা হয়। ২০১৬ সালের ১ ফেব্রæয়ারি আজাদ হোসেন কালু তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের নিয়ে কবিতাকে অপহরন করে । পরবর্তিতে ২ ফেব্রæয়ারি গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী মহল্লার রাজু ঘরামীর বাড়ির পাশে একটি ডোবা থেকে কবিতার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ । অভিযোগপত্রে বলা হয়, কবিতার লাশের পেটের সঙ্গে সিল পাটা রসি দিয়ে বাঁধা ছিল এবং গলায় পেলাষ্ট্রিকের সুতলী দিয়ে পেচানো ছিল। তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ২০১৬ সালের ২ ফ্রেবুয়ারি নিহত কবিতার বাবা মোঃ আইনুল হক বাদি হয়ে আজাদ হোসেন কালুকে প্রধান আসামিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার কয়েক দিন পরে প্রধান আসামি কালু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ ছেড়ে লেবাননে আত্মগোপন করে।
কবিতা হত্যা মামলাটি ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল তদন্তের জন্য বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ নিজাম উদ্দিন অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তকালে ৩৪ জন স্বাক্ষির স্বাক্ষ্য গ্রহন করে তদন্ত শেষে আজাদ হোসেন ওরফে কালুকে প্রধান আসামি করে তিন আসামিকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয় এবং ৫জনকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। অভিযোগ পত্রে আসামিকে পলাতক দেখানো হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, আসামি আজাদ হোসেন কালু মনের ক্ষোভ মিটানোর জন্য অপর আসামি মোর্শেনা আক্তার সোনাই ও খায়রুল সরদারের সহায়তায় কবিতাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়া জোর পূর্বক ধর্ষন করছে। পরে গলায় ফাঁস লাগাইয়া নির্মমভাবে হত্যা করিয়া লাশ গুম করার জন্য কবিতার মাজায় পাটা ভাংগা অংশ নাইলনের দড়ি বাধিয়া পুকুরের পানিতে ফালাইয়া দেন।