গৌরনদী
নয় শত টাকা ঋৃনের দায়ে মামলা, দুগ্ধপোষ্য শিশু বাড়িতে রেখে নারীর হাজতবাস
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের নয়শত টাকা ঋৃন পরিশোধ না করায় এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পপুলার মাল্টিপারপাস সোসাইটি নামে একটি ঋৃনদান সমিতির ব্যবস্থাপক। মামলায় ৮ মাসের শিশু সন্তানের মাকে (নারীকে) গ্রেপ্তার করে গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ জেল হাজতে প্রেরন করেছে। দুই দিন হাজতবাস করে শুক্রবার জামিনে মুক্তি পান হতদরিদ্র নারী।
স্থাণীয় লোকজন, পুলিশ ও ভূক্তভোগী পরিবার জানান, গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋৃনদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসেছ বাটাজোর পপুলার মাল্টিপারপাস সোসাইটি নামে একটি সংগঠন। এলাকার লোকজন জানান, অভাবি মানুষের কাছে গিয়ে সমিতির ব্যবস্থাপক ঋৃন নিতে উৎসাহিত করে চড়া সুদে ঋৃন দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মহাজনী সুদী ব্যবসা পরিচালণা করে আসছেন। ঋৃন গ্রহনকারীরা কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ কিংবা বিলম্ব হলে সমিতির ব্যবস্থাপক ও মাঠ কর্মীরা বিভিন্নভাবে সদস্যদের মানুষিকভাবে হয়রানী ও শারীরিক অত্যাচার করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের বাসুদেবপাড়া গ্রামের সেলিম হাওলাদারের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম (৩৫) অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালে বাটাজোর পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ঋৃনদান সমিতি আমি ৩০ হাজার টাকার ঋন নেই। সমিতির নিয়মানুযায়ী আমি নিয়মিতভাবে প্রতি সপ্তাহে নয়শ’ টাকা হারে কিস্তি এবং সঞ্চয়ের টাকা পরিশোধ করে অসছি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত কিস্তির এবং সঞ্চয়ের টাকা জমা পরিশোধ করেছি। এতে মাল্টিপারপাসের অনুক‚লে কিস্তি ও সঞ্চয় বাবদ ২৯ হাজার ১শ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং ৯শত টাকা পাওনা থাকে । ২০২০ সালে মার্চ মাসে দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস শুরু হলে ওই কর্মহীন হয়ে পড়ায় শেষ কিস্তির কিস্তির ৯শত টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। পপুলার মাল্টিপারপাস সোসাইটি আমার কাছে ৯শ টাকা পাওনা থাকে। ওই পাওনা টাকার জন্য সমিতি আমার কাছে কখনো তাগাদা কিংবা এবং কোন নোটিশও দেয়নি। নোটিশ না দিয়ে নিয়ম কাননের তোয়াক্কা করে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে যা আমি জানি না।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ১৯ মে গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ রফিকুল ইসলাম বাসুদেবপাড়া কালীবাড়ি বাজারে গিয়ে আমাকে খোঁজাখুঁজি করে। আমাকে বাজারে না পেয়ে ওই দিন সাড়ে ১১টায় মধ্যে আমাকে থানায় দেখা করার জন্য স্বজনদের কাছে খবর দিয়ে আসেন। খবর পেয়ে ৮ মাসের শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে আমি সরল মনে ওই দিন দুপুরে গৌরনদী থানায় গেলে পুলিশ অঅমাকে জানায় পপুলার মাল্টিপারপাস সোসাইটি আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং মামলায় ওয়ারেন্ট বের হয়েছে। আমাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান। বাড়িতে আমার দুগ্ধপোষ্য শিশু রয়েছে জানানো হলে আমাকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠঅন। আমি দুই দিন হাজত খেটে আজ জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আসি। দুই দিন আমার দুগ্ধ শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করতে পারেনি। আমি পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির লাইসেন্স বাতিল পূর্বক কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানাই।
অভিযোগের ব্যপারে পপুলার মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বাটাজোর শাখার কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। সংগঠনের স্থানীয় ব্যবস্থাপক মোঃ আলমগীর হোসেনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নারী সদস্য নুরুন্নাহারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ওই সদসস্যের বিরুদ্ধে আমি মামলা করিনি আমার আগের ব্যবস্থাপক মামলা করেছে। তবে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বাড়িতে রেখে মাকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো অমানবিক । এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২০ সালে পিরোজপুর একটি আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয় (যার নম্বর- সিআর- ৪৫৩/২০)। আদালতে মামলায় আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে তা তামিল করার জন্য থানায় পাঠালে আমি আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। গৌরনদী উপজেলা কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ভুক্তভোগি পরিবারের পক্ষ থেকে আমাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। করোনাকালীন সময়ে ওই মাল্টিপারপাস সোসাইটির কর্মকর্তাদের সহনশীল হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।