গৌরনদী
প্রতারনার মাধ্যমে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রধান শিক্ষক, মামলা প্রত্যাহারে বাদিকে হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মৃত নারায়ন চন্দ্র দাসের পুত্র ও রামসিদ্ধি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতারক প্রদীপ চন্দ্র দাস (৪৫) অধিক মুনাফার প্রলোভনে ফেলে প্রতারনার মাধ্যমে গৌরনদী উপজেলার ৩১ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ৪০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী গৌরনদী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি টি.এম আলতাফ হোসেন বাদি হয়ে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে প্রদীপ চন্দ্র দাস ও তার সহদরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। আসামি প্রদীপ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মামলা প্রত্যহারে বাদি টি.এম আলতাফ হোসেনকে হুমকি দিচ্ছে।
ভূক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, গৌরনদী উপজেলার সুন্দরদী গ্রামের মৃত নারায়ন চন্দ্র দাসের পুত্র প্রতারক প্রদীপ চন্দ্র দাস (৪৫) রামসিদ্ধি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি প্রদীপ চন্দ্র দাস ও তার সহদর অঞ্জন দাস (৪৩) উপজেলার টরকী বন্দরে অয়ন জুয়েলার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানে জুয়েলারি ব্যবসা করে আসছিল। আসামি প্রদীপ চন্দ্র দাস (৪৫) সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তুলে। অধিক মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গত ৪ বছরে ৩১ জন শিক্ষকসহ স্থানীয় ৪০ ব্যক্তির কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তিতে ২০১৯ সালে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ছুটির দরখাস্ত জমা দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে গোপনে ভারতে চলে যান। স্থানীয় আত্মীয় স্বজনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাকে ভারত থেকে দেশে আনা হয়। ওই সময় এক সালিস বৈঠকে প্রদীপ চন্দ্র দাস ৩১ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ১ কোটি ১২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে ৬ মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার মুচলেকা দেন। কিন্তু পরবর্তি শিক্ষকদের টাকা ফেরত না দিয়ে তালবাহানা শুরু করে।
এ ঘটনায় গৌরনদী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি টি.এম আলতাফ হোসেন বাদি হয়ে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে প্রদীপ চন্দ্র দাস ও তার সহদরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার বাদি অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক শিক্ষক প্রদীপ চন্দ্র দাস অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসার নামে আমার কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একইভাবে নীলখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালামের কাছ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা, বড় কসবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল খায়েরের ২ লাখ, মাগুরা মাদারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিপ্লব সরকারে ৪ লাখ, কাঠালতলী গ্রামের কাজী আসাদুজ্জামান ১০ লাখ, চাঁদশী ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কাজী আসাদুজ্জামানের দেড় লাখসহ ৩১ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ১ কোটি ১২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে আত্মসাত করেছে। এ ছাড়া এলাকার বিভিন্ন মানুষকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে মোট ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, আমি অবসরে যাওয়ার পরে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ আমাকে বলে তাকে ১০ লাখ টাকা দিলে মাসে ব্যবসার যে লাভ হবে তা দিয়ে মাসিক খরচ হয়ে যাবে। আমি লোভে পরে পেনশনের টাকা থেকে ১০ লাখ দিয়ে আমি পথে বসেছি। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছি। প্রদীপের প্রতারনায় পরে সর্বস্ব হারানোর কথা জানালেন শিক্ষক আব্দুল মতিন, বি.এম ইউনুস আলী, আসমা আক্তার, আসাদ তালুকদার, শিউলী খানম, মোঃ মমিন খানসহ অনেকেই।
ভূক্তভোগী শিক্ষককরা বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রতারক শিক্ষক প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর আবেদন করলে জেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টি তদন্তের জন্য গৌরনদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামিলকে দায়িত্ব প্রদান করেন। গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফয়সাল জামিল বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, রামসিদ্ধি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্বে) প্রদীপ চন্দ্র দাস উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষকদের নিকট হতে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপন করেছিল। ওই সময় তিনি দুই মাস পর পার ছুটির আবেদন ডাকযোগে শিক্ষা অফিসে পাঠাতেন। তার সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষা অফিসে কোন যোগাযোগ ছিল না। তার বিরুদ্ধে প্রতারনা করে অর্থ হাতিয়ে আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরন করা হল।
গৌরনদী উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি টি.এম আলতাফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, প্রতারক প্রদীপ চন্দ্র দাস আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন তালবাহানা করে অদ্যবধি শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেয়নি। প্রতারক শিক্ষক প্রদীপের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করেছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে প্রদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিযেছেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মামলা প্রত্যহারের জন্য প্রদীপ চন্দ্র দাস সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে ভয়াবহ পরিনতি ভোগ করতে হবে বলে আমাকে শাসিয়ে দেন। বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।