গৌরনদী
উজিরপুরে সরকারি চাল ফেরত দিতে মিল মালিকের তালবাহানা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুরের জয় অটো রাইস মিলের মালিক আব্দুল মজিদ ভুইয়া বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সরকারি চাল ফেরত না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চুক্তি অনুযায়ি চাল দেয়ার সময়সীমার পরে অতিরিক্ত প্রায় এক মাস পার হলেও মিল মালিক সরকারি গুদামে চাল না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেছে। চাল ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাগিদ দেয়ায় তাদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনার প্রভাবে বাজারে চালের অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির কারনে অধিক মুনাফা নিতে মিল মালিক আব্দুল মজিদ ভুইয়া সরকারি চাল বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
উজিরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলায় আমন ধান সংগ্রহ শেষে করোনা ত্রান কাজের জরুরী প্রয়োজনে ধান ছাটাই করার সিদ্বান্ত নেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। গত ৫ এপ্রিল বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তার মাধ্যমে উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর জয় অটো রাইস মিলের মালিক ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক আব্দুল মজিদ ভুইয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তি অনুযায়ি মিল মালিক আব্দুল মজিদ ভূইয়া ৭ এপ্রিল উজিরপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার কাছ থেকে ১০০ মেট্রিক টন আমন ধান বুঝে নেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ি ১০ এপ্রিল ধান ছাটাই করে উজিরপুর খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ৬৬ মেট্রিক টন চাল সরবারহ করার কথা ছিল। ধান ছাটাইর জন্য মিল মালিককে প্রতি টন ধান বাবত ১২শ টাকা পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়। জয় অটো রাইস মিলের প্রতিদিন ১০০ মেট্রিক টন ধান ছাটাইয়ের সক্ষমতা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, মিল মালিক আব্দুল মজিদ ভূইয়া সরকারি ধান ছাটাই করে গুদামে চাল সরবারহ না করে অধিক মুনাফার করতে ওই চাল বাজারে বিক্রি করেছে। করোনার প্রভাবে হঠাৎ করে বাজারে চালের অত্যাধিক মূল বৃদ্ধির ফলে (প্রতি ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৮শ থেকে ৯শ টাকা বৃদ্ধি) মিল মালিক আব্দুল মজিদ শর্ত ভঙ্গ করে সরকারি চাল গুদামে সরবারহ না করে বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়েছে। বর্তমানে বাজারে নতুন বোরো ধান আসলে তা কিনে ছাটাই করে গুদামে সরবারহ করার ফন্দি এটে গুদামে চাল দিতে তালবাহানা ও কাল ক্ষেপন করেছে।
উজিরপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আব্দুস সালাম জানান, চুক্তির শর্ত অনুযায়ি মিল মালিক আব্দুল মজিদ ১০ এপ্রিল চাল না দেয়ায় তাকে একাধিক তাগিদ পত্র দেয়া হয়। কিন্তু মিল মালিক তাগিদপত্র রাখেননি। বরং তাগিদ পত্র দেয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের চিঠি নিয়ে যাওয়া কর্মীর সঙ্গে অসেজৈন্যমূলক আচরন করে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার হুমকি দিয়ে ভয় ভীতি দেখান। চাল না দেয়ায় গত ১৩ এপ্রিল সরেজমিনে তিনি জয় অটো রাইস মিলে যান। সেখানে গিয়ে মিলে কোন আমন ধান দেখতে পাননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ এপ্রিল মিল মালিক জেলা কর্মকর্তা বরাবের সময় চেয়ে আবেদন পত্রে আমার সুপারিশ নিতে কার্যালয়ে আসেন । আমি সময় বৃদ্ধির সুপারিশ করতে অসম্মতি জানালে আব্দুল মজিদ ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরন করেন। গতকাল রোববার পর্যন্ত মিল মালিক আব্দুল মজিদ সরকারি গুদামে চাল সরবারহ করেনি।
উজিরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, ১৪ এপ্রিল উজিরপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বিষয়টি লিখিতভাবে আমাকে অবহিত করেন। ওই দিন খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মিল মালিক মজিদ ভূইয়াকে চাল না দেয়ায় কেন ব্যবস্থা নেওযা হবে না কারন দর্শানোর নোর্টিশ দেয়া হয়। কিন্তু সে ওই নোটিশ রাখেনি। যার অনুলিপি বরিশাল জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। অভিযোগের ব্যাপারে জয় অটো রাইস মিলের মালিক আব্দুল মজিদ ভুইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নোটিশ রাখিনি কিংবা অসৌজন্যমূলক আচরন করেছি এর কোনটাই ঠিক না। লেবার সংকটের কারনে সময়মত চাল সরবারহ করতে পারিনি। তবে জেলা কর্মকর্তার কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছি। বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা মোঃ তাইজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি কর্মস্থলে নতুন হওয়ায় সব বিষয় সম্পর্কে আমি অবহিত নই। উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সত্যতা যাচাইর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।