গৌরনদী
বরিশাল প্রবেশে পুলিশী বাঁধা, খাল সাতরে সীমান্ত পাড়
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ করোনাভাইরাসের সংক্রমন ও বিস্তার রোধে বরিশালের লকডাউন ঘোষনা করে বাইর থেকে কোন একটি লোক বরিশালে ঢুকতে না পারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। অন্যস্থান থেকে বরিশালে প্রবেশ ঠেকাতে প্রতিটি প্রবেশ পথে কঠোর নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশালের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়ায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল সাতরে বরিশাল ঢুকছে ঢাকা- নারায়নগঞ্জ ফেরত শত শত মানুষ।
স্থানীয় লোকজন, পার হওয়া মানুষ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমন ও বিস্তার রোধে গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্য থেকে বরিশালের লকডাউন ঘোষনা করে বাইর থেকে কোন একটি লোক বরিশালে ঢুকতে না পারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। বরিশালের প্রতিটি সিমান্তবর্তী পথে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। প্রবেশ রোধে তদারকি করছেন কযেকজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড। এর আগে মাদারীপুরে করোনা বিস্তার লাভ করায় মাদারীপুরের কালকিনি ও বরিশালের গৌরনদীর প্রায় ১২টি সীমান্ত পথ বন্ধ করে দেয় গৌরনদী প্রশাসন।
সীমান্ত এলাকা গৌরনদীর ভূরঘাটা ও কালকিনির মসজিদ বাড়ির স্থানীয়রা জানান, নারায়নগঞ্জে করোনা বিস্তার ঘটায় যানবাহন বন্ধ থাকা সত্বেও মানুষ বিভিন্নভাবে গ্রামে ছুটছে । তারা রিকাসা, ভ্যান, ট্রালার ও পায়ে হেটে জীবনের ঝুকি নিয়ে কষ্ট করে গ্রামে ফিরছে। কোন ভাবেই প্রশাসন থামাতে পারছে নামানুষের ঢল। প্রতিদিন বরিশাল ঢুকতে গিয়ে সীমান্তবর্তী ভুরঘাটায় পুলিশী বাধার সম্মুখিন হচ্ছে তারা। ফলে তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমানাতগঞ্জ-বাকাই ভায়া ভূরঘাটা খাল সাতরে পাড়ি দিয়ে সীমান্তপাড় হয়ে বরিশালসহ বিভিন্ন এলকায় ঢুকছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়র পরিষদের সাবেক সদস্য কামাল হোসেন (৫৪), ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম (৫৫) বলেন, মহাসড়ক দিয়ে বরিশাল ঢুকতে না পেরে অবৈধ পথে আসা নারায়নগঞ্জ ও ঢাকা ফেরত শত শত লোক খাল সাতরে পাড় হয়ে বরিশাল প্রবেশ করছে। খালটি অনেক বড় এবং কোথায়ও কোথায়ও কচুরীপানা ভর্তি থাকায় খাল পাড় হওয়া জীবন অনেকটা ঝুঁকিপূর্ন। এ ছাড়া কালকিনির ডাসার, নবগ্রাম, শশীকর, বালীগ্রাম, মসজিদ বাড়ি ও গৌরনদীর বাকাই ও সমরসিংহ এলাকা দিয়ে খাল সাতরিয়ে পার হচ্ছে। এলাকার লোকজন জানান, নারায়নগঞ্জ থেকে আসা লোকজন বরিশাল সীমান্তে পুলিশী বাধা পেয়ে ফিরে এসে পরনের কাপর খুলে হাতে নিয়ে জাইঙ্গা, গামছা পরে খাল পার হয়ে ওপারে গিয়ে কাপর পরে। প্রতিদিন শত শত লোক এভাবে পার হচ্ছে।
সাতরিয়ে খাল পাড় হওয়া নারায়নগঞ্জ থেকে আসা বরিশালের উজিরপুরগামী ছবর আলী (৩২), কেরামত সরদার (২৪) বলেন, মোরা গার্ন্টেসে কাম করি। কাম বন্ধ, আতে (হাতে) টাহা পয়সা নাই, খাওন নাই নারায়নগঞ্জে থাইক্কা করমু কি? হেরপর ওহানে করোনার ভয় আছে। হেইয়ার লাইগ্যা বাড়ি রওয়ানা হইয়া আইছি। পথে পথে বাধা আর বাধা । সব পার কইররা এই পর্যন্ত আইছি এহানেও বাধা। বাড়ি যাইতে অইবো হেইয়ার লাইগ্যা পলাইয়া খাল পাড় অইছি। এ্যাহন এক রহম বাড়ি যাইতে পারমু।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেড মোঃ শাহাদাত হোসেন জানান, বরিশাল লকডাউনের পরে গত ১২ এপ্রিল থেকে বাহির থেকে বরিশালে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কালকিনি ও বরিশালের গৌরনদীর সীমান্তবর্তী ভুরঘাটা সেতুতে পাহারায় পুলিশী চৌকি বসানো হয়েছে। সেখানে দিনরাত ২৪ ঘন্টা পাহারা দিয়ে প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখা হয়েছে। কোন একটি মানুষও যাতে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে তা নিশ্চিতকরনে আমরা সার্বক্ষনিক তদারকি করছি। তারপরেও সেতুর নিচ দিয়ে এবং খালের বিভিন্নস্পটে খাল সাতরিয়ে বরিশালে ঢুকছে। এ ব্যাপারে অঅমরা পদক্ষেপ গ্রহন করছি। গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, অন্য জেলা থেকে কাউকে বরিশালে ঢুকতে দেয়া হবে। এ সিদ্বান্ত বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।