গৌরনদী
ফলো আপ ঃ যৌতুক না দেওয়ায় অমানবিক নির্যাতন ॥ নির্যাতনকারী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে নির্যাতিতার বিরুদ্ধে জিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ দাবি করা যৌতুকের টাকা না এনে দেওয়ায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর গত দুই দিনেও বাদির অভিযোগ এজাহারভূক্ত করেনি পুলিশ। উল্টো নির্যাততিার বিরুদ্ধে স্বামীর মিথ্যা অভিযোগ সাধারন ডায়রীভূক্ত করেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্যাতিতার পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা।
নির্যাতিত গৃহবধূ সেলিনার অভিযোগ, স্বামী আনোয়ার খান বিয়ের সময় ৩ লাখ টাকার যৌতুক গ্রহন করেন। পরেও যৌতুকের জন্য তাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা হয়। সম্প্রতি বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা আনতে অস্বীকার করায় গত ১৭ মে স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খান তাকে বেদম মারধর করে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে তাকে মাটিতে ফেলে তলপেটে আঘাত করে এবং পা দিয়ে পাড়াইয়া গর্ভপাত ঘটায়। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় ৭দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয়রা জানতে পেরে গত মঙ্গলবার রাতে সেলিনাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সে বর্তমানে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রোগীর অবস্থা অপরিবর্তিত, এখনও শংঙ্কামুক্ত নন।
নির্যাতিত গৃহবধূ সেলিনার বড় বোন লিলি বেগম (৩০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার মূমূর্ষ বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর বোনের স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খানকে আসামি করে ২৪ মে সকালে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়েরের জন্য এজাহার দাখিল করি। পুলিশ গত ৩ দিনে সেই মামলা রুজু করেনি বরং নির্যাতনকারী স্বামী আনোয়ার খান অভিযোগ নথিভূক্ত করেছে। গত ২৪ মে নির্যাতনকারী স্বামী আনোয়ার খানের জিডিতে বলা হয়, তার স্ত্রী সেলিনা বেগম পরিবারের সকলের অজান্তে নগত টাকা ও স্বর্নালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে পালিয়ে গেছে।
স্ত্রীকে নির্যাতন করে ৭দিন ঘরে আটকে রাখেন পরবর্তিতে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন । গত ১০দিন আপনার স্ত্রী অসুস্থ্য সময় আপনার বাড়ি ও হাসপাতালে তার বিরুদ্ধে পালিয়ে যাওয়ার জিডি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বামী আনোয়ার খান গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি আপনার কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্যাতিতার এজাহার অসমান্ত থাকায় এখনও রুজু করা হয়নি সংশোধননী দেওয়ামাত্রই এজাহার রুজু করাহবে। তাছাড়া স্বামী পূবেই জিডির আবেদন করেছিল প্রয়োজনে জিডি বাতিল করা হবে। নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সহিদ খান ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, মানুষতো ভাল এভাবে কোন পশুকেও নির্যাতন করা যায়না। খুবই নির্দয়ভাবে মারধর করা হয়েছে অথচ পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা এ প্রসঙ্গে বলেন, আনোয়ার খান এলাকায় দুষ্ট চরিত্রের লোক হিসেবে চিহ্নিত ও নানান অপরাধে জড়িত। বিষয়টি পুলিশ জানার পরেও নির্যাতিতার অভিযোগ আমলে না নিয়ে নির্যাতনকারীর মিথ্যা অভিযোগ আমলে নেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এতে মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে।