প্রধান সংবাদ
উজিরপুরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা ও কচাঁ নদীতে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মহাউৎসব চলছে। নদী দুটির প্রায় ২২ কিলোমিটর স্থানে প্রায় ২৫টি অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মাসের পর মাস অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চললেও দেখার যেন কেউ নেই। বালু উত্তোলন অবৈধ ব্যবসার সমঙ্গে জড়িত রয়েছে ক্ষশতাসীন দলের প্রায় ২০ নেতাকর্মী ও সমর্থক। বালু উত্তোলনের ফলে উজিরপুর সাতলা সড়ক, সাতলা-বাগধা ভেরি বাধৈঁর সাতলা অংশ ও কচা নদীতে সদ্য নির্মিত ৬৫ কোটি ব্যায়ের সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের ঐতিহ্যবাহী খর¯্রােতা সন্ধ্যা নদীটি উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর হইতে ওটরা পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটর নদীর দুই পাশ থেকে বালু উত্তোলন ফলে ভাঙ্গনের দাপটে অনেকটাই প্রাকৃতিক সৌন্দার্য্য হারিয়েছে। সন্ধ্যা নদীর শিকারপুর থেকে ওটরা এলাকায় ৭টি স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন মোঃ টিটুল বিশ্বাস (৪৫),সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ হারুন আর রশিদ (৫০), মোঃ জয়নাল আবেদীন (৪০), মোঃ রাজু খান (২৮), মোঃ রাশেদ আহম্মেমদ (৩২), মোঃ ওমর ফারুক (৩৫)। কচা নদীর ভবানীপুর থেকে সাতলা প্রায় ১২ কিলোমিটর নদীর প্রায় ১৫টি স্থানে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ফরিদ হোসেন (৪৫), মোঃ তারিক হোসেন (৩৫), মাইনুদ্দিন তালুকদার (৩৬), মোঃ সোয়েব বেপারী (৪০), কার্তিক মÐল (৩৭) ১২/১৫ জন। এরা সকলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মী সমর্থক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা নদীর সাতলা ইউনিয়নের বিকন স্কুল ও বাজারের দক্ষিন পাশ এলাকায় অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মোঃ টুটুল বিশ্বাসের লোকজন। এ সময় অবৈধভাবে বালু তোলা সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, তারা দিন মজুরের কাজ করেন। মেশিন মালিক টুটুলের নির্দেশে কাজ করছি। সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ হারুন আর রশিদ কচা নদীর নয়াকান্দি এলাকায় ও , ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আরেক সদস্য মোঃ জয়নাল আবেদীন জল্লা ইউনিয়নের টাকাবাড়ি এলাকায় অবৈধ মেশিন দিয়ে বালু তুলছেন। এলাকাবাসি জানান, তারা দাপটের সঙ্গে বালু উত্তোলন করলেও কেউ কিছু তাদের বলতে সাহস পাচ্ছে না।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, মাসের পর মাস অব্যহতভাবে রাত দিন অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালী দলের নেতাকর্মীরা। তাদেরকে নিষেধ করা সত্বেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে ব্যবসা করছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসকে অবহিত করলে তারা দেখেও না ভান করছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুইপাশে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। ঝুকির মধ্যে রয়েছে রাস্তা, বৈরী বাঁধ ও সেতু। এ সময় দক্ষিন সাতলা গ্রামের ফজলুল হক বিশ্বাসের ছেলে আশিকুল ইসলাম (২৫) অভিযোগ করেন, শিবপুরের আনোয়ার বিশ্বাস তার অবৈধ ডেজার বসিয়ে প্রায় এক লাখ ফুট বালু তুলে নেওয়ায় তার বাড়ির পুকুর সংলগ্ন এলাকা আকস্মীকভাবে ডেবে গিয়ে জলাশয়ে পরিনত হয়। সাতলা গ্রামের মাহাবুব বালী অভিযোগ করে বলেন, সন্ধ্যা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকায় আমার বাড়ির পাশে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলায় বাড়ির আঙ্গিনায় ভেঙ্গে নদীতে মিশে গেছে। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেও কোন বিচার পাইনি। এলাকাবাসি অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দাপটের সঙ্গে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
রাজাপুর গ্রামের দেবেন মন্ডল (৬০) আফতাব হোসেন (৪২) ভবানীপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলম (৪৫)সহ অনেকেই জানান, সন্ধ্যা ও কচা নদীতে মাসের পর মাস ২০/২৫ টি মেশিন দিয়ে অবিরাম বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে বরিশাল সওজের উজিরপুর সাতলা সড়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতলা বাগধা বাঁধের ভেরীর সাতলা অংশ। এ ছাড়া উপজেলার কঁচা নদীর সাতলা এলাকায় বরিশাল এলজিইডি ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মান করেন। সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ ডেজিং দিয়ে বালু উত্তোলন করায় সেতুটি হুমকির মুখে রয়েছে।
অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ীরা হারুন অর রশিদ বলেন, আমি আগে বালু উত্তোলন করতাম বর্তমানে আমার ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। মোঃ জয়নাল আবেদীন (৪০), মোঃ রাজু খান (২৮), মোঃ রাশেদ আহম্মেমদ (৩২), মোঃ ওমর ফারুক (৩৫) বালু উত্তোলনে নদীর কোন ক্ষতি হচ্ছে না। সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ফরিদ হোসেন (৪৫), মোঃ তারিক হোসেন (৩৫), মাইনুদ্দিন তালুকদারসহ কয়েকজন বলেন, বালু তোলায় ভরাট নদী খনন হয় এতে ক্ষতি কি বরং সরকারের উপকারই হয়। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাছুমা আক্তার বলেন, কোন নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূনর্ অবৈধ। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত হওয়ার পরে অভিযান শুরু করেছি। অভিযান শুরু করায় অবৈধ ড্রেজারের মালিকগন খবর পেয়ে নদীতে মেশিন রেখে পালিয়ে গেছে। তাই এখন থেকে আমরা মেশিন ধ্বংশ করার উদ্যোগ নিয়েছি। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার অভিযান চালিয়ে সাতলার ইউপি সদস্য হারুন অর রশিনের ড্রেজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। এতে না থামায় বালু ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরী করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল মজিদ সিকদার ওরফে বাচ্চু বলেন, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনে ব্যপারে আমিসহ প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এ অবৈধ বালু ব্যবসায় যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।