প্রধান সংবাদ
উজিরপুর মডেল থানার ওসি ও কনষ্টবলের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা নারীর মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল ও কনষ্টবল জাহিদুল ইসলামকে আসামি করে বৃহস্পতিবার বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে নির্যাতিতা নারী বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক সানা মোঃ মারুফ হোসাইন মামলাটি আমলে নিয়ে আগামি ৭ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বরিশাল পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। এর আগে এ ঘটনায় বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। প্রাথমিক তদন্তে কনষ্টবল জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত সোমবার কনষ্টবল জাহিদুলকে বরিশাল পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে পেশকার মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার হাজিরআলী গ্রামের মৃত মোঃ হেলাল মাতবরের (পুলিশের সাবেক এএসআই) স্ত্রী রাশিদা বেগমের (৫২) বাদি হয়ে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল ও কনষ্টবল জাহিদুল ইসলামকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। বাদি মামলায় উল্লেখ করেন, আসামিরা বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে কর্মরত আছেন। পুলিশে বিভাগে থাকিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া মানুষকে হয়রনী ও নির্য়াতন করা তাদের নেশা ও পেশা। মেয়ে অপহরনের পর আসামির হুকুমে তার (বাদির) উজিরপুরস্থ বাসার মালামাল আটকে রাখে অপহরন মামলার আসামিরা। ওই ব্যাপারে থানায় একাধিকবার অভিযোগ দিয়ে কোন বিচার না পাওয়ায় উজিরপুরের ওসির বিরুদ্ধে বরিশাল ডিআইজির কাছে অভিযোগ দেন। এতে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল ক্ষিপ্ত হন। পরে মালঅমাল উদ্ধার করে দিবে এই মর্মে ওসি তাকে থানায় ডেকে পাঠান। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ওসির সাথে থানায় দেখা করতে গেলে ওসি তাকে চায়ের দোকানে বসতে বলেন। সেখানে গিয়ে থানার কনষ্টবল জাহিদুল ইসলাম ওই নারীকে থাপ্পর চোপারসহ মারধর করে এবং গালে সিগারেটের আগুন চেপে ধরে পুড়িয়ে দেয়। পুলিশ কনষ্টবলের হাতে মার খেয়ে ওসির কাছে বিচার দিতে গেলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে নারীকে গালাগাল করে ও দুই গালে থাপ্পড় দিতে দিতে রুম থেকে বের করে দেন। আদালতের বিচারক সানা মোঃ মারুফ হোসাইন মামলাটি আমলে নিয়ে আগামি ৭ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
বরিশাল পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম এ ঘটনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হক, সদস্য বাকেরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন, বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাসুমুর রহমান বিশ্বাসকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ কনষ্টবলের বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়ায় পরের দিন সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কনষ্টবল জাহিদুল ইসলামকে বরিশাল পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
তদন্ত কমিটির সময় সিমা ৫ দিন মঙ্গলবার শেষ হলেও কমিটি দুই দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন । সে অনুসারে বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় প্রতিবেদন জমা দেননি।
ক্লোজ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ কনষ্টবল জাহিদুল ইসলাম কথা বলতে রাজি হননি। উজিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দিন খান কনষ্টবল জাহিদুল ক্লোজ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। আদালতে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, আদালতে মামলা দায়ের সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কিছুই বলতে পারবো না। তদন্ত কমিটির প্রধান বরিশাল পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ নাইমুল হক বলেন, এখনো তদন্ত কাজ শেষ হয়নি রিপোর্ট দিতে আরো ২/১ দিন সময় লাগবে। বরিশাল পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, আদালতের নির্দেশ এখনো হাতে পাইনি, পেলে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।