গৌরনদী
অদম্য মেধাবী \ দোকান কর্মচারী হতদরিদ্র বুলবুলের কলেজে পড়া অনিশ্চিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ও সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদম্য মেধাবী মো. বুলবুল হোসেন শত বাধা উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার সাফল্য জনক ফলাফলের আনন্দ কলেজে ভর্তির কথা ভাবতেই দুচোখের স্বপ্ন অন্ধকারে ঢেকে গেছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজে ভর্তির দুশ্চিন্তা পরিবারকে গভীর হতাশায় ফেলেছে। অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে মেধাবী বুলবুল ও তার বাবা মা।
স্থানীয় লোকজন, সহপাঠি ও শিক্ষকরা জানান, যেদিন এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় সেদিন দিনটি ছিল সোমবার। বিদ্যালয়ের সহপাঠিরা যখন নিজের ফলাফল শুনে বিদ্যালয়ে আনন্দ উল্লাস করছিল। ঠিক তখন গৌরনদী বাষষ্টান্ডে একটি মোবাইলেরর দোকানে আনমনে কর্মচারির কাজ কাজ করছিল বুলবুল। সে জানে না তার পরীক্ষার ফলফলা কি?। কোন এক সহপাঠি ফলাফল জানানোর জন্য দোকানে গিয়ে বুলবুলকে খুজতে থাকে। ওই সময় মালিকের নির্দেশে পরিস্কার পরিচ্ছনাতার কাজ করছিল বুলবুল। এ সময় সহপাঠি বুলবুলের জিপিএ-৫ পাওয়ার খবরটি দিতেই আনন্দে দোকান মালিককে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বুলবুল।
গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের হতদরিদ্র খলিলুর রহমান (৬৫) ও মাতা আলেয়া বেগম (৪৮)র এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার। বাবা দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ্য । ভিটে মাটি বিক্রি করে বাবা খলিলুর রহমানের চিকিৎসা করিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে পরিবারটি। মা আলেয়া বেগম বিভিন্ন বাসায় ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালায় । সময়ে পেলে টেইলারিং ফোরনে কাজ করে কোন রকম অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে ।
২০১৪ সালে গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় বুলবুল জিপিএ-৫ ও ট্যালেন্টুলে বৃত্তি লাভ করেন। অভাবের তাড়নায় পুত্র বুলবুলের লেখাপড়া বন্ধ করে পরের দোকানের কর্মচারির হিসেবে কাজে যোগ দেন। সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. অলিউল্লাহ জানান, সমাপনী পরীক্ষার ছেলেটির ফলাফল দেখে বুলবুলের বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে তারা তাদের উদ্যোগে বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে ভর্তি করেন। দোকানে কাজ করত সময় পেলে বিদ্যালয়ে ক্লাস করত। বুলবুলকে শিক্ষা উপকরন সরবারহ ও বিদ্যালয়েল তহবিল থেকে পরীক্ষার ফি প্রদানসহ সব ধরনের সহায়তা দেয়া হয়। জেএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের ধারা অব্যহত রেখে বুলবুল জিপিএ-৫ পান। তখন বুলবুলে প্রতি শিক্ষকদের আকর্ষন আরো বেড়ে যায়। বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে এসএসসি ফরম পুরন করা হয়। বুলবুল সদ্য প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পৃষ্টপোষকতা পেলে সে অনেক দুর যেতে পারবে। তার উচ্চ শিক্ষার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ।
বুলবুলের মা আলেয়া বেগম (৪৮) জানান, ছোট বেলা থেকেই ছেলের লেখাপড়ার দিকে খুব ঝোক ছিল। ও সব সময় তাদের শান্তনা দিয়ে বলত, মা আমি লেখা পড়া করে বড় হতে চাই, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমাদের দুঃখ কষ্ট ঘুচিয়ে দিবো। তোমরা আমায় লেখা পড়া করতে দাও। ছেলের আকুতি দেখে লেখাপড়া খরচ যোগাতে মুই নিজেই পরের বাড়িতে কাজ করি। মোর বাবায় পরের দোকানে কাজ করে সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় লেহাপড়া করছে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাজানের ভাল রেজাল্টে খুব খুশী অইছি কিন্তু ওরে কলেজ পরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কি কইররা কলেজে পড়ার খরজ যোগামু। নিজের পেট চলে না কি দিয়া কলেজে পড়ামু।
বুলবুল বলেন, বাবা অসুস্থ্য অক্ষম, মা কোন রকম সংসার চালায় তাই পরিবারের আহার যোগাতে দোকানে কাজ করি। বুলবুল বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দোকান মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, দোকোনের মালিক আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। সে মাঝে মধ্যেই আমাকে ছুটি দিয়ে ক্লাসে পাঠাত। পড়ার জন্য সুযোগ দিত। স্কুলের স্যারেরা কোন টাকা পয়সা নিত না। সর্বপরি সরকারি গৌরনদী কলেজের শিক্ষক ইউনুস আলীর স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বুলবুল বলেন, ইউনুস স্যার রাতে আমাকে বিনা পয়সার পড়াইতেন। সকলের সহায়তার এই পর্যন্ত আইছি। মুই বিসিএস পাশ করে সরকারি কর্মকর্তা হতে চাই। সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন পুরনে অনেক কষ্ট করছি, সামনেও করমু কিন্তু লক্ষে যাইতে চাই। এ্যাহন কলেজে ভর্তি লইয়া চিন্তায় আছি কি করইররা কলেজে পড়মু। দোকান মালিক মো. মান্না জানান, বুলবুল দোকানে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে তারপড় রাতে লেখাপড়া করেছে। সে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছে। বুলবুলের কলেজে ভর্তি ও পড়াশোর জন্য তিনি সমাজের বৃত্তবান এগিয়ে আসার আহবান জানান।