প্রধান সংবাদ
শর্তসাপেক্ষে তিনমাসের জন্য খুলে দেয়া হল আগৈলঝাড়ার দুঃস্ত মানবতা নামে অবৈধ হাসপাতাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ অবৈধ ও লাইসেন্সবিহীনসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ৬ ফেব্রæয়ারি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে দুঃস্ত মানবতা নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে পরের দিন অস্ত্রপাচারসহ কার্যক্রম শুরু করলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদেনরে পেক্ষিতে র্শত সাপেক্ষে গত বৃহস্পতিবার তিন মাসের জন্য হাসপাতালটি খোলার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। এ নিয়ে ৯ ফ্রেুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদক প্রকাশিত হয়।
স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের ফুলশ্রী এলাকায় দুঃস্ত মানবতার হাসপাতাল নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স বিহীন ১০ বেডের একটি অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারনা করে আসছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে ভুল ও অপচিকিৎসায় একাধিক রোগীর মৃত্যু ও বেশ কিছু রোগীর অঙ্গহানি ঘটনা ঘটে । উপজেলা ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তাদের জড়িমানাসহ সর্তক করা হলে তা উপক্ষো করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যান দুঃস্ত মানবতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ অপচিকিৎসায় এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৬ ফেব্রæয়ারি অবৈধ হাসপাতালটি বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল চন্দ্র দাস ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এবং অতিসম্প্রতি অপচিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। পরের দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রশাসেনর সিদ্বান্ত উপেক্ষা করে নিজেরাই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস ৮ ফেব্রæয়ারি আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম. মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির দুই ছিলেন, ডেন্টাল সার্জন ডা. মনন কুমার দে ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শুকলাল সিকদার। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরে দুঃস্ত মানবতার হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ হিরন্ময় হালদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেন। অবেদনরে পেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসপাতালের অদক্ষ-অযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অব্যাহতি প্রদান, রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ প্রদান, প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনারর সরকারি নীতিমাল অনুসরন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনায়ল, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমুহের যথাযথ কাগজপত্র সংগ্রহ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সুপারিশমালা মেনে চলার শর্তে হাসপাতালটি গত বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. একেএম. মনিরুল ইসলাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ে দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালের পরিচালক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদার প্রশাসনের শর্ত ও শুপারিশ বাস্তবায়নের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বন্ধ হাসপাতাল খোলার অনুমতি পান।
শর্ত মনে নিয়ে হাসপাতাল খোলার কথা স্বীকার করে দুঃস্ত মানবতার হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ হিরন্ময় হালদার বলেন, আমি নই আমেরিকা প্রবাসী জুবায়ের হোসেন হাসপাতালের মালিক। আমাদের সব কিছুই ঠিকঠাক রয়েছে তারপরেও কেন এসব হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয় । আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসরকারী হাসপতাল চালু করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল পরিচালনার শর্ত তিন মাসের মধ্যে পুরন করবে এই মর্মে লিখিত দেন। এলাকার সাধারন মানুষের চিকিৎসা সেবার কথা মাথায় রেখে হাসপাতালটি খুলে দেয়া হয়েছে।