প্রধান সংবাদ
আগৈলঝাড়ায় সরকারি ¯জলকপাট বন্ধ করে দিয়ে নেতাদের মাছ চাষ, বোরো চাষ ব্যাহত
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের পশ্চিম বাগধা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নির্মিত ¯জলকপাট বন্ধ করে দিয়ে কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা মাছ করেছেন। এতে ৮টি গ্রামের প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ ব্যহত হচ্ছে। বার বার অনুরোধ করা সত্বেও বাধ কেটে না না দেয়ায় গত মঙ্গলবার এলাকাবাসি আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। জরুরভিত্তিতে বাধ কেটে জলকপাট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী কৃষক, মৎস্যচাষী, পাউবোর কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের বিল হিসেবে খ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ননের আমবৌলা, জয়রামপট্রি, বাগধা, নিমারপাড়, পশ্চিম বাগধা, কোটালীপাড়ার কোটালীপাড়া, কালাবাড়ি, হংগোলপাড়সহ এলাকার কৃষকদের স্বার্থে সংরক্ষনে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোডর্ (পাউবো) ১৯৮৬-১৯৮৭ইং অর্থ বছরে একটি জলকপাট নির্মানে প্রকল্প গ্রহন করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই সব গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ এক সময় সারা বছর পানি বন্ধি থাকত। তারা জমিতে তেমন ফসল ফলাতে পারতেন না। ফলে তারা অর্থিক অভাব অনাটনে থাকতেন। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পানির সঠিক নিয়ন্ত্রন করার জন্য সাতলাÑবাগধা ভেরিবাঁধের পশ্চিম বাগধা গ্রামে জলকপাট নির্মানের প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। ফলে অগৈলঝাড়ার পশ্চিম বাগধা থেকে আলামদি হয়ে কোটালীপাড়াা কান্দি পর্যন্ত খালের পানি নিয়ন্ত্রন ও ব্যবহার করে এলাকার কৃষকসহ সাধারন মানুষ বোরাচাষ উৎপাদন করেন জলকপাট স্থানীয় কৃষকরা জানান, জলকপাট সুবিধা নিয়ে পানি নিয়ন্ত্রন করে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ননের আমবৌলা, জয়রামপট্রি, বাগধা ও নিমারপাড়, পশ্চিম বাগধা, গোপারগঞ্জের কোটালীপাড়া, কালাবাড়ি, হংগোলপাড়সহ আশপাশ এলাকার প্রায় দুই হাজার কৃষক এক হাজার হেক্টর জমিতে পানি সরবারহ করে বোরোর আবাদ করে আসছিল। সম্প্রতি সময়ে বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সততা মৎস্য খামারের সভাপতি মো. আনোয়ার কামাল, আওয়ামীলীগ সমর্থক সততা মৎস্য খামারের সহ-সভাপতি মো. সেলিম তাজ, আওয়ামীলীগ সমর্থক ও বাগধা কলেজের প্রভাষক মো. রেজাউল ফেরদৌস, বাগধা ২নং ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. ফরমানসহ কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জলকপাটটি দুইপাশে বাঁশ ও গাছের গুড়া গেড়ে ও টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করে বাঁধটি বন্ধ করে দিয়ে পানি চলাচল আটকে দিয়েছে। ভ’ক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা জমি চাষ দিয়ে বোরো চারা রোপন করেছি। সেই ধানের ক্ষেতে এখস পানির খুবই প্রয়োজন অথচ জলকপাট বন্ধ করে বাঁধ দেয়ার ফলে আমরা জমিতে পানি দিতে পারছি। প্রভাবশালী মাছ চাষীদের বার বার বাঁধ কেটে দেয়ার অনুরোধ করা সত্বেও তারা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাগধা গ্রামের মো. মশিউর রহমান, মো. আব্বাস উদ্দিন ও আব্দুস সালামসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, বাঁধ অপসারন করে ¯øইসগেট খুলে দেয়ার জন্য নেতাদের কাছে বার বার ধর্না দিলেও তারা বাধ অপসারন করে নাই। এতে জমির ধানের চারার গোড়া পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে বাঁধ অপসারন করা না হলে আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো এবং আমরা ফসল উৎপাদন করতে পারবো না। আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ হালদার বলেন, আমি বিষয়টি শোনার পরে সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সততা মৎস্য প্রকল্পের সহ-সভাপতি অঅওয়ামীলীগ নেতা মো. সেলিম তাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষের কথা স্বীকার করে বলেন, কৃষকদের বিকল্পভাবে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাঁধে চাষীদের কোন ক্ষতি হয় না। এলাকার কতিপয় লোক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানী করেছে। প্রভাষক রেজাউল ফেরদৌস নিজেকে আওয়ামীলীগের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগ করি। বাগধা এলাকার প্রায় সকলেই একমত হয়ে আমরা নিজেদের জমিতে মাছ করছি। কারো কোন অভিযোগ নেই । কিন্তু একজন লোক নিজের স্বার্থে আমাদের বিরোধিতা করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়নবোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সাতলা বাগধা বন্যানিয়ন্ত্রন বাধ নির্মান করায় পানি উঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হলে পরবর্তিতে ¯øইসগেট নির্মান করা হয়। পানি নিয়ন্ত্রন করে কৃষকরা তাদের স্বার্থ সংরক্ষন করে অসছে। শুনেছি বাঁধ বন্ধ করার বিষয়ে সাধারন কৃষকরা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমাদের দপ্তরে কোন অভিযোগ দেয়নি। তারপরেও খোজ নিয়ে বাঁধ অপসারন করে বোরো চাষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপুল কুমার দাস কৃষকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁধ অপসারনের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি আবুল বাশারকে মৎস্য চাষীদের সঙ্গে কথা বলে ¯øইসগেট খুলে দিতে বলা হয়েছে। আবুল বাশার বলেন, মৎস্য চাষীদের ডেকে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ অপসারনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম ভাট্রির সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন করলে তা ধরেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে ফোন দিয়েও সারা পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসি জানান, ইউএনওর নির্দেশ সত্বেও বাঁধ অপসারনে চেয়ারম্যানের ভূমিকা রহস্যজনক।