গৌরনদী
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংস্কার \ কাজ শেষ হয়েও হল না শেষ, চূড়ান্ত বিল প্রদান
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংস্কার কাজে শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম, দূর্নীতি ও নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত জুন মাসে নির্মান কাজ শেষ করে সাড়ে আট চল্লিস কোটি টাকার চুড়ান্ত বিল গ্রহন করেন। জুন মাসে কাজ শেষ হলেও দেড় মাস যেতে না যেতেই সড়কটির অধিকাংশ স্থানেই পুনঃরায় খানাখন্দ পরিনত হয়েছে। সড়কটিতে যানবাহন স্বাভাবিক রাখতে মেরামত কাজ করছেন ঠিকাদারের লোকজন।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকা -বরিশাল মহাসড়কের ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে উজিরপুরের জয়শ্রী পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটর সড়ক দুই পাশে ৬ ফুট সম্প্রসারন ও সংস্কারের জন্য ২০১৬-২০১৭ই অর্থ বছরে ৩২ কোটি টাকার দুটি প্রকল্প গ্রহন করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মহাসড়কের উজিরপুরের জয়শ্রী থেকে গৌরনদীর প্রাইভেট আনোয়ারা হাসপাতাল পর্যন্ত কাজ পান এম,এম বিল্ডার্স এবং গৌরনদীর আনোয়ারা হাসপাতাল থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত কাজ পান এম,এস,এ,এম,পিজে,ভি লিঃ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি গত ৩০ জুন কাজ শেষ করে সাড়ে ৪৮ কোটি টাকার চুড়ান্ত বিল গ্রহন করেন। গত জুন মাসে কাজ শেষ হলেও দেড় মাস যেতে না যেতেই সড়কটি পুনরায় ছোট বড় হাজারো গর্তের সৃষ্টি হযেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জয়শ্রী থেকে ভূরঘাটা সড়কের অধিকাংশ স্থান্ েছোট বড় গর্ত। সড়কের অনেক স্থানে রাস্তা ফেটে গেছে। আবার কোথাও কোথাও ডেবে গেছে। ২৩ কিলোমিটার সড়কের ৬টি স্পটে জোড়াতালি দিতে কাজ করেছেন ঠিকাদারের লোকজন। আশোকাঠী ফিলিং ষ্টেশন থেকে হরিসোনা পর্যন্ত রাস্তা ফেটে গেছে এবং ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। হরিসোনা থেকে কাসেমাবাদ মাঝারি ধরনের ও কাসেমাবাদ থেকে মাহিলাড়া গোটা রাস্ত জুড়ে হাজারো গর্ত। বাটাজোর বাসষ্টান্ডে বড় বড় গর্তে ইট দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। বাটাজোর থেকে বামরাইল পর্যন্ত বড় বড় গর্তে হয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যা মেরামত করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। দক্ষিন কাসেমাবাদ থেকে লালপুল এক কিলোমিটর সড়কে শতাধিক বড় গত দেখা গেছে। এ সময় বাটাজোর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য মো. ইদ্রিস আলী (৫০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাজ শেষ না হতেই সেই পুরানো খানাখরন্দ পরিনত হযেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দূর্নীতি করে নামে মাত্র কাজ করে বরাদ্ধের ঠাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ায় সড়কের বেহাল দশা। চালক সেলিম সরদার(৫৫) কেরামত হোসেন(৪৮) বলেন, গত দুই বছর ধরে রাস্তায় দূর্ভোগ পোহাচ্ছি। আশা ছিল কাজ শেষ হলে দূর্ভোগ লাঘব হবে। তা আরো বেড়ে গেল। মাঝখানে সরকারের ব্যায় হল কোটি কোটি টাকা। দক্ষিন কাসেমাবাদ মাদ্রসার সামনে গত ভরাটের কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এসময় সড়কের বেলাল দশার কথা জানতে চাইলে শ্রমিক সর্দার রিপন কাজী (২৮) বলেন, ঠিকাদার যেভাবে বলে আমরা সেভাবে কাজ করি, মুজুরি নেই। এর বেশী কিছু বলতে পারব না।
আনোয়ারা হাসপাতালের উত্তর পাশ থেকে আল্লার মসজিদ পর্যন্ত এক কিলোমিটর সড়কে ১৬০টি গর্ত রয়েছে। আল্লার মসজিদ থেকে টরকী পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক গর্ত ভরাট করে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। কটকস্থল এলাকায় দেখা গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিনষ্ট হওয়া সড়ক মেরামত করছে। এ সময় শ্রমিক বাদশা (২৫) বলেন, কাজ শেষ করে চলে গেছি নতুন করে গর্ত হওয়ায় টলি ভর্তি করে মাল এনে মেরামত করে বাস চলাচলে সমস্যা দূর করছি। বার্থী বাসষ্টাÐ থেকে মন্দির পর্যন্ত গোটা রাস্ত খেরই ফাটার অবস্থা। বার্থী তারা মন্দির থেকে উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার খারাপ রাস্তা সংস্কার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তিনটি গ্রæপ। কর্মরত শ্রমিকরা জানান, কাজ শেষ করার পরে নতুন করে গর্ত হওয়া ও ডেবে যাওয়ায় তা মেরামতকরন কাজ চলছে। এসময় স্থানীয় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই বছর ধরে রাস্তা সংস্কার কাজ চলছে । কাজ শেষ না হতেই সাবেক রাস্তায় পরিনত হযেছে। এ সংস্কার ও উন্নয়ন করে লাভ কি?
চূড়ান্ত বিল নেওয়ার কথা স্বীকার ও অনিয়ম দূর্নীতির কথা অস্বীকার করে মেসার্স এম,এস,এ,এম,পিজে,ভি লিঃ মালিক মো. সোহরাব আলী বলেন, সড়কের ফাউÐেশনই খারাপ। উপরে যতই ভাল কাজ করা হ্কো রাস্তা টিকবে না। তাছাড়া ধারন ক্ষমতার চেয়ে অনেক ভারি ভেহিকেল চলায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারনে নয়। একই দাবি করে আরেক ঠিকাদার মেসার্স এম,এম বিল্ডার্সের মালিক মো. নাসির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়কটির নিচে হেরিংবÐ রয়েছে তা তুলে ফেলে নতুন করে রাস্তা না করা পর্যন্ত রাস্তা টিকবে না। সড়কে আমাদের লোকজন সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করছে যাতে যানবাহন চলাচলে কোন সমস্যা না হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প তদারকি কাজে নিয়োজিত বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হানিফ দুই ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, অতী বৃষ্টি, সড়কের ভীত ঠিকমত না থাকা ও ওভারলোডের কারনে সমস্যা হচ্ছে। যতক্ষন রাস্তা ঠিক না হবে ততক্ষন ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো হবে