গৌরনদী
গৌরনদীতে গ্রাম পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসি, বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইল্লা গ্রামের গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবিরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসি । থানা পুলিশের সহায়তায় গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির একের পর এক বেপরোয়া চাঁদাবাজি, হয়রানী, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। গ্রাম পুলিশকে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তারসহ শাস্তির দাবিতে বুধবার সকালে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে স্মারক লিপি প্রদান করেছে ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির একজন চাঁদাবাজ ও মাদক সেবী ও দুশ্চরিত্র লোক। সে থানা পুলিশ ও প্রশাসনের দোহাই দিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করে। তার চাঁদাবাজিতে অতীষ্ট গ্রামের মানুষ। হুমায়ুন কবির বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে থানার কতিপয় অসাধু পুলিশকে ব্যবহার করে থাকেন। গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও গ্রেপ্তারসহ দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিতে দুইশত চল্লিস জন গ্রামবাসি স্বাক্ষর করেন। এ আগে গ্রামবাসি খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করেন।
গত ২৭ এপ্রিল রাতে উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ইল্লা গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের বাড়িতে বেড়াতে আসেন কালকিনি উপজেলার খাসেরহাট গ্রামের মো. হেলাল বেপারীর পুত্র মানিক হোসেন বেপারী(২০) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম(১৮)। ওই দিন রাতে গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির অসামাজিক কাজের অপবাদ দম্পতির কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। বাকি টাকা না দেয়ায় দম্পতির নামে অপহরন মামলা দিয়ে পুলিশে দেন। সেই দিন থেকে দম্পতি জেল হাজতে রয়েছে। ওই ঘটনায় পরের দিন খাঞ্জাপুর ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাদ হুমায়ুন কবিরকে কারন দর্শানো নোটিশ দেন। এ ছাড়া চাঁদাবাজির অভিযোগে মজিবর রহমান বাদি হয়ে গ্রাম পুলিশকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। গত ২০ দিনে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় গতকাল থেকে হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে গ্রামবাসি।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মান্নান(৬০) বলেন, গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবিরের অত্যাচারে গ্রামের মানুষ অতীষ্ঠ। গ্রামের নিরহ মানুষকে মাদকে জড়ানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করে না দিলে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করে। হুমায়ুনের ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। সম্প্রতি সালতা গ্রামের শামছুল হক বেপারীর পুত্র সেলিম বেপারী(৪৪)কে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। হতদরিদ্র হকার হানিফ সরদারকে মারধর করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে দেন। একই অভিযোগ করেন, ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হক(৬৫) এবং ওই ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো. সিদ্দিক হাওলাদার(৪৬)। ইল্লা গ্রামের সেরাজ উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র মো. কবির হোসেন(২৮) অভিযোগ করে বলেন, গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির নিরহ মানুষকে জঙ্গি, সরকারি বিরোধী কর্মকাÐে জড়িত এবং মাদকে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকে। পূর্ব ডুমুরিয়া গ্রামের কাসেম শরীফের পুত্র গফুর শরীফ (৪৫) বলেন, গত দুই আগে আমার বিরুদ্ধে থানায় রিপোর্ট আছে বলে ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা হাতিয়ে নেন হুমায়ুন। একই গ্রামের আবেদ আলী ঘরামীর পুত্র আ. হালিম ঘরামী(৪৭) বলেন, গত ১ এপ্রিল আমি ও আমার বন্ধু রুবেল সরদার(২৮) রাত করে বাড়ি ফেরার পথে হুমায়ুন আমাদের পথ আগলে ভয়ভীতি দেখায় এবং পরের দিন পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার হাতিয়ে নেন। গ্রামের সুফিয়া বেগম(৪৫) বলেন, সামান্য ঝগড়াঝাটির ঘটনায় হুমায়ুন কবির পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমার মামাতো বোনে হাফেজা বেগমের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন হুমায়ুন। মজিবর রহমান বলেন, আমি হুমায়ুনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ায় আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। গভীর রাতে বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলতে বলে আতংক সৃষ্টি করে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবির সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারীরা সড়কের উপরে জোয়ারে নৌকা চালায়, অভিযোগের কোন সত্যতা নেই।
এ প্রসঙ্গে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাত বলেন, গ্রাম পুলিশ হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে নিরহ গ্রামবাসিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানী, চাঁবাজি, মারধর ও অসাদাচরনের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। ওর অত্যাচারে গ্রামবাসি অতীষ্ট। হুমায়ুনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি নিজে নির্বাহী অফিসার ও ওসির কাছে লিখিত দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুনিরুল ইসলাম গ্রাম পুলিশকে সহায়তা দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খালেদা নাসরিন ইউপি চেয়ারম্যানের লিখিত অভিযোগ ও এলাকাবাসীর স্মারকলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।