গৌরনদী
গৌরনদীতে ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেড়শ বছরের দুর্গা মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী মহল্লায় আপন ভাই ও ভাতিজাদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটলেও পারিবারিক বিরোধ হিসেবে বিষয়টি দেখছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ।
উপজেলার সুন্দরদী মৌজার নারায়ণ মিত্র গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগে বলেন, আমার বড়ভাই বজ্রবিলাস মিত্রের কাছ থেকে ১৯৮৬ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি সুন্দরদী মৌজার ৫৯৬ নং দলিলমূলে ১০৪৫/২ নং খতিয়ানভুক্ত ১৯৩৪ দাগের অধীনে ১০ শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমির উপর অবস্থিত দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘সুন্দরদী মিত্র বাড়ি দূর্গা মন্দির’ও ওই সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত। ‘গত ২৫ নভেম্বর সকালে বড় ভাই বজ্রবিলাসের ছেলে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র লোকজন নিয়ে নিয়ে পুরনো এই দূর্গা মন্দির ভেঙে ফেলে এবং জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমরা ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকি। নারায়ণ মিত্রের ছেলে নন্দ মিত্র জানান, তাদের বংশপরম্পরায় প্রায় দেড়শ বছর ধরে এই মন্দিরে দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে নানা ধর্মীয় অনুষ্টান পালন হয়ে এসেছে। সরকারি প্রণোদনা আওতাভুক্ত মন্দিরটি একটি নিয়মিত কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল। বাবার ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে আমার চাচাতো ভাই রিপন ও সুমন তাদের লোকজন নিয়ে মন্দিরটি ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। দখলের সুবিধার্থে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র রাতের আধারে মন্দিরের প্রতিমা ও পুজার সামগ্রী সরিয়ে ফেলেছে এবং অনেক মালামাল বিক্রিও করে দিয়েছে। এমন ঘটনা শুধু জমি দখল নয় আমাদের ধর্মীয় অনুভ‚তির ওপর নির্মম আঘাত।’ অপরদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে রিপন মিত্র ও সুমন মিত্র বলেন, ‘জমিটি আমাদের ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া। মায়ের অসুস্থতা এবং ঋণের দায়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। তাই মন্দিরটি সরিয়ে সেখানে বসতঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সুন্দরদী মিত্র বাড়ি দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক ননী দাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ১৫-২০ বছর ধরে মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মন্দির ভাঙার ঘটনার বিষয়ে অবগত ছিলাম না। তবে ঘটনা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি। মন্দির শুধু ইট-পাথরের দেয়াল নয় এটি আমাদের বিশ্বাস, অনুভ‚তি ও পরিচয়ের প্রতীক।’
এদিকে মন্দির ভাঙায় ঘটনায় স্থানীয় সনাতনধর্মাবলম্বীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মন্দির ভেঙে ফেলা শুধু আইন লঙ্ঘন নয় এটি ধর্মীয় অনুভ‚তির ওপরও আঘাত। স্থানীয়রা বলেন, ‘মন্দির আমাদের প্রার্থনা, বিশ্বাস ও ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্র। এটি ব্যক্তিগত জমি-বিরোধ নয় বরং একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ। এ ধরনের ঘটনা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ স্থানীয় সনাতন সমাজ জবরদখলকৃত জমি উদ্ধার করে ঐতিহাসিক দুর্গা মন্দির পুনঃস্থাপন ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু জমিজমা সংক্রান্ত এবং দুই পক্ষই জমি নিজের বলে দাবি করছেন। তাই উভয় পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে দেওয়ানি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে।’
ৃ


