গৌরনদী
গৌরনদীতে খৃষ্ঠান পল্লির শতটি পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ জমা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সন্ত্রাসী হামলা, নারীর শ্লীলতাহানি ও জীবন নাশের হুমকির মুখে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী খৃষ্ঠানপল্লির এক শতটি পরিবার সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছে। সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে আতংকে রয়েছে নারী সদস্যরা। আতঙ্কের বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানায় আবেদন করেছেন পল্লির বাসিন্দারা।
সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, ভূক্তভোগী ও নির্যাতনে শিকার ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী গ্রামে জে, এল ১৫৬নং পিংলাকাঠী মৌজার এস,এ ৭০২নং খতিয়ানের ৩০৬১ নং দাগের ২একর ৬৯ শতাংশ জমির একটি দীঘি নিয়ে খৃষ্ঠান পল্লির রবার্ট হালদার, প্রদীপ হালদার, সমীর হালদার, নিত্যনন্দ হালদার, নির্মল হালদার ও গংদে সঙ্গে ্কই গ্রামের প্রভাবশালী পিতা মৃত করম আলীর পুত্র মো. নুর উদ্দিনের বিরোধ চলে আসছিল।
রবার্ট হালদার (৪৫) সমীর হালদার(৩৫)সহ স্থানীয়রা জানান, তাদের পূর্ব পুরুষ বাপ দাদাসহ গত ৮০ বছরেরও বেশী সময় ধরে ওই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন। চলতি ভূমি জরিপে ওই জমি তাদের নামে রেকর্ডভূক্ত হয় এবং তারাই ভোগ দখল করেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল হোসেন ও মো. নুরউদ্দিনসহ কতিপয় ব্যক্তিরা ওই সম্পত্তি জবর দখল নিতে জাল জালিয়াতি কাগজপত্র তৈরী করে দখলের পায়তারা করে আসছে। মো. আবুল হোসেন জমির জাল ডিগ্রী তৈরী করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করলে খৃষ্ঠান পল্লির বাসিন্দা যোগেস হালদার বাদি হয়ে ১৯৮২ সালে ডিগ্রী রোধে বরিশালের গৌরনদী সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। কাগজপত্রে দেখা গেছে, আট বছর মামলা পরিচালনার পর ১৯৯০ সালের ২৯ এপ্রিল বাদি যোগেস হালদারের পক্ষে আদালতের বিচারক রায় প্রদান করেন।
পরবর্তিতে ওই চক্রের সদস্য আরেক প্রভাবশালী পিতা মৃত করম আলীর পুত্র মো. নুরু উদ্দিন জাল কাগজপত্র বলে ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বরের পর বিভিন্ন সময় জমির মালিকানা দাবি করে দখলের পায়তারা করে আসছেন। রবার্ট হালদার(৬০) অভিযোগ করেন, গত ২০ জানুয়ারি নুরুউদ্দিনের ভাতিজা মাইনুদ্দিন (৩৫) ও নুর জামাল (৩০)র নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী নিয়ে দীঘির মালিকানা সত্ব প্রতিষ্ঠায় সাইনবোর্ড ঝোলাত আসেন। এ সময় তারা বাধা দিলে তাদের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তিন জনকে আহত করে। গ্রামবাসির বাধার মুখে এক পর্যায়ে সটকে পড়ে। পরবর্তিতে সন্ত্রাসীরা হানা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে।
গত ২২ জানুয়ারি রাতে খৃষ্ঠান পল্লির রোমিও হালদারের স্ত্রী সাথী হালদার(২৪)র কে রান্নঘর থেকে জোর পূর্বক তুলে নিয়ে নির্যাতনের চেষ্টা চালায় কতিপয় দূবৃত্তরা। গৃহবধূর ডাক চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে দূর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে আতংকে রয়েছে খৃষ্ঠান পল্লির নারীরা। সাথী হালদার অভিযোগ করে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধে আমার স্বামী অগ্রনী ভূমিকা রাখার কারনে তাকে জব্দ করতে আমাকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। পল্লির কাজল হালদার, রিনা হালদার বলেন, সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ইজ্জতহানির হুমকি দিচ্ছে। যে কারনে আমাদের স্কুল পড়–য়া কিশোরী ও যুবতি মেয়েরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। সাথী হালদারকে অপহরন চেষ্টায় ঘটনায় ওই দিন গৌরনদী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) শারমিন সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্তধীন রযেছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খৃষ্ঠান পল্লিতে গিয়ে দেখা গেছে, দীঘির চার পাশে সংখ্যালঘু খৃষ্ঠান সম্প্রদায়ের একশতটি পরিবারের বসবাস। এলাকাবাসি জানান, বাপ দাদাসহ পূর্ব পুরুষদের পৈত্রিক সূত্রেই স্থায়ী বাসিন্দা। সুবিধাভূগিরা দীঘির চার পাশে আরসিসি পিলার করে ভাঙ্গন রোধে গাইড ওয়াল নির্মান করে তারা যৌথভাবে মাছ চাষ করেছে। এসময় পিংলাকাঠী গ্রামের মো. মোস্তফা হাওলাদার(৫৫), মো. আব্দুল হালিম (৪৫) বলেন, আমরা বোঝার পর থেকে দেখি খৃষ্ঠান পল্লির বাসিন্দরা দীঘির সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছে। হঠাৎ করে কতিপয় লোকজন দীঘির মালিকানা দাবি করে দখল করতে এসে খৃষ্ঠানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সুনীল হালদার(৬৮) অভিযোগ করে বলেন, নুরউদ্দিনের ভাতিজা মাইনুদ্দিন ও নুর জামাল সন্ত্রাসীদের নিয়ে খৃষ্ঠান পল্লিতে ঢুকে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ ও মহিলাদের বেইজ্জতি করার হুমকি দিচ্ছে। হামলার আশংকায় আমার রাত জেগে পাহারা দিয়ে থাকি। গ্রাম পুলিশ মো. হাবিবুর রহমান(৫৫) বলেন, খৃষ্ঠানপল্লির আতঙ্ক কাটাতে আমি নিজেও পল্লিবাসীর সঙ্গে পাহারায় অংশ নিচ্ছি।
অভিযোগ অস্বীকার ও জমির বৈধ মালিকানা দাবি করে মো. নুরুউদ্দিন বলেন, আমার দাদা জঙ্গু সরদার প্রায় শত বছর পূর্বে লক্ষ্মিচরন সেনের কাছ থেকে দলিলমূলে সম্পত্তি ক্রয় করেন। দলিল মোতাবেক সম্পত্তির মালিক আমি। তার ভাতিজা মহিউদ্দির ও নুর জামাল হামলা ও হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, খৃষ্ঠান পল্লির বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিতে ষরযন্ত্র ও মিথ্যাচার চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা বলেন, জমির মালিকানার বিরোধ আদালতে নিস্পত্তি হবে, খৃষ্ঠান পল্লিতে যদি কেউ আতঙ্ক সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, খৃষ্ঠানপল্লিতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দখলের চেস্টা ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে যা তদন্ত চলছে। আতঙ্কের বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।