গৌরনদী
৪৭ বস্তা চাল কিনে দেওয়া ও বদলীই শাস্তি ॥ গৌরনদী খাদ্য গুদাম গুদাম কর্মকর্তার দূর্নীতির সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরকারী খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিনার বৈদ্যের বিরুদ্ধে গুদামের চাল বিক্রি করে কম দামে পচা চাল ক্রয় করে তা মিশিয়ে ষ্টক ঠিক রাখার অভিযোগ উঠে। অভিযোগ পেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ গুদাম পরিদর্শনে এসে হাতেনাতে পচা চাল মেশানো ধরে ফেলে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন। কর্তৃপক্ষ শাস্তি হিসেব জব্দকৃত ৪৭ বস্তা কিনে দিয়ে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিনার বৈদ্যেকে উজিরপুর বদলীর আদেশ দেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন সংশ্লিস্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ স্থানীয়রা।
খাদ্য গুদামের কর্মচারী, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর গৌরনদী উপজেলার গৌরনদী বন্দরস্থ সরকারি খাদ্য গুদামের সামনে দুটি ট্রাকে ২০০ বস্তা চাল আসে। ওই দিন রাতে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মিনার বৈদ্য তার নিজস্ব লেবার দিয়ে চাল খালাস করে গুদামজাত করেন এবং গোপনে বন্ধেরে মধ্যে ভাল চালের সঙ্গে মিশানো শুরু করে ১৫৩ বস্তা মেশানো শেষ করে। খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা প্রহরী মীর আব্দুল হক বলেন, ওই দিন আমি ছুটিতে ছিলাম পরের দিন (১৬ সেপ্টম্বর) কাজে যোগদান করে দেখি গুদামের মধ্যে কয়েকজন লেবার পচা চাল মেশানোর কাজ করছেন। এ সময় আমি বাধা দিলে তারা আমার উপর চড়াও হয় এবং বাধা উপেক্ষা করে চাল মেশানো অব্যহত রাখেন। পরবর্তিতে আমি গোপনে বিষয়টি মুঠোফোনে বরিশাল বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিন ও বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ডিসি ফুড) মো. মশিউর রহমান স্যারকে জানাই। স্যারেরা ওই দিন তাৎক্ষনিকভাবে খাদ্য গুদামে চলে আসেন এবং হাতে নাতে পচা চাল মেশানো ধরে ফেলেন এবং ৪৭ বস্তা পচা চাল জব্দ করেন। এ ঘটনায় বরিশালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রন কার্যালয়ের সহকারী রসায়নবিদ মো. বোরহান উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিস্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর বরিশালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান ও বরিশাল বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিনের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্টে পচা আমদানি মেশানোর সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করে বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (আরসি ফুড) রেজা মোহাম্মদ মহসিন বলেন, তদন্ত কমিটির রির্পোটে গুদামে জব্দকৃত ৪৭ বস্তা চাল থেকে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা ও নিরীক্ষা করে দেখা গেছে ওই চাল পচা। পচা চালই ভাল চালের সঙ্গে মেশানো হয়েছে। বস্তায় পচা চাল মেশানো বিষয়টির সত্যতা পেয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযুক্ত মিনার কান্তি বৈদ্য’র বিরুদ্ধে বিভাগী মামলা না করে তাকে উজিরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেব বদলি আদেশ দেয়া হয়েছে এবং বানারীপাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের সাব-ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমানকে গৌরনদী খাদ্য গুদামে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও গৌরনদী খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় দূর্নীতির সত্যতা পাওয়ার পরেও যদি পচা চাল কিনে দিয়ে বদলিই হয় যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তাহলে বিভাগে দূর্নীতি বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মকর্তারা বড় ধরনের দূর্নীতি করতে উৎসাহিত হবে। জব্দকৃত ৪৭ বস্তা কিনে দিল কিন্তু ১৫৩ বস্তা যে মিশিয়ে সরবারহ করল তার কি বিচার হল? মিনার বৈদ্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান। অভিযোগের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মিনার কান্তি বৈদ্য বদলীর আদেশ হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।