গৌরনদী
উজিরপুরে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের নাথারকান্দি গ্রামে ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। শিশুটি বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় দুই মাস চিকিৎসা শেষে গত রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকা হলিফেমিলি হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার তিন সহদরসহ অজ্ঞাতনামা ৮জনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, পরিবারের অভিযোগ ও পুলিশ জানান, উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের নাতারকান্দি গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক নজরুল ইসলাম হাওলাদারের পুত্র নাতারকান্তি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সৈকত হাওলাদার (১৩) নিজের পড়ার খরচ যোগাতে দিনমজুরের ক্জা করেন। দিন মজুরের কাজ করে আয় থেকে পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি সংসার চালাতে বাবাকে সাহায্য করেন। কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, প্রায় দুই মাস পূর্বে (৪ মে) সৈকত হাওলাদার একই গ্রামের ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী মো. শাহজাহান গোমস্তার পুত্র সোহাগ গোমস্তা বাড়িতে মাটি কাটার কাজ নেন। ওই দিন সোহাগ গোমস্তার পটেক থেকে ১০৫ টাকা খোয়া যায়। খোজাখুজি করে টাকা না পেয়ে সোহাগ ক্ষিপ্ত হন এবং টাকা চুরির জন্য ছাত্র সৈকতকে দায়ি করে।
সোহাগের সহপাঠি আরিফ হোসেন, জোবায়ের হাওলাদার বলেন, ৪ মে দিন মজুরের কাজ শেষে বাড়িতে আসেন স্কুল ছাত্র সৈকত। সন্ধ্যার পূর্বে সৈকত আমাদের সঙ্গে নাতারকান্দি পাগলার ভিটা মাঠে খেলায় যোগ দেন। এ সময় একই শাহজাহান গোমস্তার পুত্র সোহাগ গোমস্তা (৩৮) তার সহদর মিজান গোমস্তা(৪২), মহসিন গোমস্তা(২৮), আসলাম গোমস্তা ৭/৮ জন সহযোগীকে নিয়ে মাঠে উপস্থিত হয়ে সৈকতকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে সৈকত হাওলাদারকে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানবিকভাবে মারধর ও নির্যাতন করেন। সহপাঠিরা নির্যাতনের বর্ননা দিয়ে বলেন, সৈকতের মাথাকে গাছের সঙ্গে আঘাত করে। ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমরা বহু অনুনয় বিনয় করলেও ছেড়ে দেননি। নির্যাতনের আরো প্রত্যক্ষদর্শী হারতা গ্রামের মো. শাহাদাত বেপারী, শাান্তু বেগম জানান, তারা এগিয়ে এসে শিশুটি নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে হামলাকারীরা গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় শিশুটিকে রেখে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অবস্থা খারাপ হবে হুমকি দিয়ে চলে চলে যান।
স্থানীয়রা আহত সৈকতকে উদ্ধার করে স্বরুপকাঠী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। নির্যাতনের শিকার সৈকতের বড় ভাই মো. শিপন হাওলাদার অভিযোগ করেন, তিনি বিষয়টি সোহাগ গোমস্তার বাবা শাহজাহান গোমস্তা ও হারতা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. ফারুক হোসেন কাছে বিচার দেন কিন্ত তারা বিচার তো দুরের কথা আহত ভাইকে একবার দেখতে আসেননি। শিপন হাওলাদার আরো জানান, ১০ মে অবস্থার অবনতি ঘটলে তার ভাই সৈকতকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। শেবাচিমের চিকিৎসক মো. আনোয়ার হোসেন মাথায় রক্তক্ষরনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে উন্নত চিকিৎসার ঢাকা হলিফ্যামিল হাসপাতালে প্রেরন করেন। ১৬ মে চিকিৎসক মো. মশিউর রহমান মাথায় অস্ত্রপাচার করে জমাকৃত রক্ত অপসারন করেন।
সৈকতের চাচা মিন্টু হাওলাদার বলেন, ধার দেনা ও ভিটেমাটি বিক্রি করে ভাতিজা সৈকতের চিকিৎসা করানো হয়। টাকার অভাবে ঢাকায় বেশি দিন থাকতে না পারায় কিছুটা সুস্থ্য হলে তাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসি। পুনরায় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ১ জুলাই হলিফ্যমিলি হাসপাতালে ভর্তি করার পর (২ জুলাই) রবিবার সন্ধ্যায় ভাতিজা সৈকত মারা যান। তিনি বলেন, মিথ্যা চুরি অপবাদ দিয়ে ভাতিজাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে কেউই কথা বলতে সাহস পায় না, মোরা কি বিচার পামু না?
রবিবার সন্থ্যায় সৈকতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহপাঠী, ছাত্র ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং সন্ধ্যার পরে তারা নাতারকান্দিতে বিক্ষোভ করে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহাগ গোমস্তা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পাগলার ভিটায় গিয়ে দু,একটা চর ধাপ্পর দিয়েছিলাম তা অসুস্থ্য হওয়ার মত নয়। সৈকত ১০৫ টাকা চুরি করেছে এবং আগেও একবার আমার টাকা চুরি করেছিল। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার স্কুল ছাত্রের মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, গতকাল স্কুল ছাত্রের বাবা নজরুল ইসলাম হাওলাদার বাদি হয়ে সোহাগ গোমস্তা (৩৮) তার সহদর মিজান গোমস্তা(৪২), মহসিন গোমস্তা(২৮), আসলাম গোমস্তাসহ ১০ জনকে আসামিকরে একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাটি প্রায় দুই মাস পূর্বের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।