গৌরনদী
গৌরনদী প্রতিরোধ দিবসে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানের আহবান মুক্তিযোদ্ধাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মোল্লা আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছর পরেও শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সাউদের খালপাড়ে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। ভয়াবহ দিনটিকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে স্মরণ করে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহবান করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন আরো বলেন, আমি মরার আগে যেন ওই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ দেখে যেতে পারি।
টশবগে যুবক আলী হোসেন মোল্লা। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার জহরগান্ধি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে এসএসসি পাশ করেন। পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি গৌরনদী কলেজে একাদশ শ্রেনির মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়া পর কলেজে সুবিধামত যাতায়াতের জন্য ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল গ্রামের মোঃ জয়নাল আবেদ্দীন মিয়ার বাড়িতে গৃহ শিক্ষক হিসেবে থেকে পড়াশুনা শুরু করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ২৫ এপ্রিল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর সাউদের খালপাড় (কটকস্থল) নামকস্থানে পাক সেনাদের সাথে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই দিন আলী হোসেন মোল্লা নিজের জীবন বাজি রেখে পাক সেনাদের বুলেট থেকে তার গৃহকর্তার ছেলেকে রক্ষা করেন। শুধু তাই নয় দেশ ও মাত্রিকার টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করে দেশ স্বাধীন করেন।
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার বান্দাবাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫২ সালের ১০ ডিসেম্বর আলী হোসেন মোল্লা জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম মোঃ কফিল উদ্দিন মোল্লা, মাতার নাম বড় বিবি। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ২৫ এপ্রিল পাক সেনাদের সাথে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর সাউদের খালপাড় (কটকস্থল) নামকস্থানে। সেইদিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সাতজন পাক সেনা নিহত ও পাক মিলিটারীদের ছোঁড়া বুলেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঠৈ গ্রামের সেনা সার্জেন্ট সৈয়দ আবুল হাসেম, বাটাজোরের মোক্তার হোসেন, গৈলার আলাউদ্দিন সরদার ওরফে আলা বক্স ও চাঁদশী গ্রামের পরিমল মন্ডলসহ ঘটনাস্থলেই ১৫ জন এলাকাবাসী শহীদ হন। এ সময় পাক সেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে আশপাশের কয়েকটি গ্রামে তান্ডবসহ হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেনাবাহীর তান্ডবে এলাকার লোকজন বাড়ি ছেলে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় আমার (আলী হোসেন) গৃহকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদ্দীন মিয়ার ছোট ছেলে (মাত্র ৬ মাস বয়স) মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়াকে নিয়ে তার মা কি করবেন দিশে হারা হয়ে পরেন। এক পর্যায়ে কোন উপায়ন্ত না দেখে আমি গিয়াস উদ্দিনকে কাধে করে নিয়ে দৌড়ে পালাতে থাকি। এর মধ্যে ফাক সেনাদের হামলার মুখে পরি। আমি গিয়াস উদ্দিনকে আমার কাছে আমানত হিসেবে ভেবে তাদের বাড়ি পাশে ডোবার মধ্যে গিয়াসকে বুকের মধ্যে রেখে শুয়ে পরি। পাক সেনাদের গুলি বিদ্ধ হলে আমি হব। এ পরে উত্তরমাদ্রা গ্রামের সমদ্দার বাড়ির পাশে সাউদেরখালপাড়ে পৌঁছলে পাক সেনাদের বহরের সামনে পরি। এ সময় পাক সেনারা আমাকে লক্ষ করে এলোপাথালী গুলি ছুরতে থাকে। আমি কোন উপায়ন্ত না দেখে খালের পাশে লডা ক্ষেতের মধ্যে অবুঝ ছোট্র শিশুটিকে নিয়ে অনেক কষ্টে আশ্রয় নেই। পাক সেনারা আমাদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে অন্যত্র চলে যায়। পরবর্তীতে আখ ও সুতা ক্ষেত, খাল, বিল পারি দিয়ে ছোট্র শিশুটিকে নিয়ে রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল গ্রামে এক বাড়িতে আশ্রয় নেই। সে খানে দুই দিন পর গিয়াস উদ্দিনের মাকে খুজে বের করে তার হাতে দিয়ে পায়ে হেটে আমার গ্রামের বাড়ি কোটালীপাড়ার বাড়িতে আসি। এক দিন পর দেশ ও মাত্রিকার টানে আমি ও আমার চতুর্থ ভাই মোসলেম উদ্দিন মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের জন্য ভারতের বিহার ক্যাম্পে যাই। সেখানে ট্রেনিং শেষ করে দেশে ফিরে হেমায়েত বাহিনীর সাথে কোটালীপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করি। সে দিনের কথা মনে পড়লে আজো আমার গা শিয়রে উঠে।