গৌরনদী
সরকারের ব্যায় প্রায় ১৫ লাখ টাকা ॥ ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত ৩০টি সরকারি দপ্তর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ন্যাশনাল আইসিটি ইনফা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-২ (ইনফা-সরকার) প্রকল্পের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি আওতায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৩১টি সরকারি দপ্তরে কানেকশন দেয়ার জন্য ঠিকাদার নির্বাচিত হন স্কায়ার ইনফরমেটিক লিমিটেড। গৌরনদী উপজেলায় ৩১টি সরকারি দপ্তরে কানেকশন দেওয়ার কথা থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র একটি দপ্তরে সংযোগ দেন। বাকি ৩০টি সরকারি দপ্তর গত দুই বছর ধরে ছিলেন ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্কায়ার ইনফরমেটিক লিমিটেড কানেকশন না দিয়ে ৩০টি প্রতিষ্ঠান বাবত সরকার কাছ থেকে দুই বছরে হাতিয়ে নেন প্রায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা । এতে ক্ষুব্ধ ৩০টি দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সংযোগ সুবিধা বঞ্চিত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ন্যাশনাল আইসিটি ইনফা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-২ (ইনফা-সরকার) প্রকল্পের অধীনে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি দপ্তরে ২০১৫ সালের শুরুতে গৌরনদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মেয়র গৌরনদী পৌর সভা, নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহাকারী কমিশনার(ভূমি)সহ ৩১টি সরকারি দপ্তরে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার জন্য ঠিকাদার নির্বাচিত হন স্কায়ার ইনফরমেটিক লিমিটেড।
গৌরনদী উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুল বারেক, পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কমকর্তা শাহ মো. আবদুল হান্নান জানান, ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তাদের কার্যালয়ে সংযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্কায়ার ইনফরমেটিক লিমিটেড ৩১টি সরকারি দপ্তরে তার টানেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংযোগটি দিয়ে দুই দিন পরে এসে অন্যান্য কার্যালয়ে সংযোগ দেওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চলে যান। অদ্যবধি (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) দুই বছরে তাদের আর খুজে পাওয়া যায়নি এবং গত দুই বছর ৩০টি সরকারি দপ্তর ছিল ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত। অথচ প্রকল্প থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ,এন,ও) দপ্তরের একটি সূত্র জানান, ন্যাশনাল আইসিটি ইনফা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-২ (ইনফা-সরকার) প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) স্বপন কুমার সরকার এ কার্যক্রম তদারকি করতে গত ২৩ মার্চ গৌরনদীতে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকারের কাছে সকল দপ্তরের কর্মকর্তাগন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত দুই বছরে ৩০টি সরকারি দপ্তরে কোন সংযোগ দেয়া হয়নি। সংযোগ না দিয়ে টাকা সরকারি তহবিল থেকে তারা বরাদ্দকৃত বিল তুলে নেন।
গতকাল বুধবার সরকারি দপ্তর সমূহে গেলে কর্মকর্তারা জানান, শুরু থেকে শুধুমাত্র নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউ,এন,ও)র দপ্তরে সংযোগ দেন। ২৯টি দপ্তরে সংযোগ দেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার টানেন। দুইটি দপ্তরে কোন তারই টানেন নাই। দুই বছরের প্রকল্প প্রায় শেষ হলেও ৩০টি দপ্তরই ছিল ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত।
ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্কায়ার ইনফরমেটি লিমিটেডের বরিশাল অঞ্চলের ইনচার্জ রায়হান রনির কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম এটি এক বছরের প্রকল্প ছিল পরবর্তিতে আরেক বছর বর্ধিত করা হয়। আমরা দুই বছরই ৩১টি সরকারি দপ্তরে সংযোগ চালু করে সম্পূর্নভাবে কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। আমাদের নিয়োগকৃত টেকনিশিয়ান সংযোগ তদারকি করত। প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে টেকনিশিয়ান না থাকায় বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে। রায়হান রনির এ বক্তব্য প্রত্যখান করে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী ফজল আহম্মেদ বলেন, গত দুই বছরে এক সেকেন্ডের জন্যও আমার দপ্তরে সংযোগ পাইনি। উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সী, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এস,এম, ফরিদ হোসেন বলেন, আমরা দুই বছর ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত দুই বছরে কোন দপ্তরে ইন্টারনেট সংযোগ দেননি। তাদের সুরে সুর মিলিয়ে একই কথা বললেন, অন্তত ১৫টি দপ্তরের কর্মকর্তাা। বিল তুলে নেওয়া প্রসঙ্গে রায়হান রনি বলেন, এখনো আমরা বিল পাইনি।
ন্যাশনাল আইসিটি ইনফা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-২ (ইনফা-সরকার) প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মতবিনিময় সভায় অভিযোগ ছিল বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউ,এন,ও) মো. মাহবুব আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, মতবিনিময় সভায় নির্বাহী পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করার পর সংযোগ স্থাপন করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য আমাকে নির্দেশনা দেন। খুব শীঘ্রই সংযোগ চালু করা হবে।