গৌরনদী
ভূয়া চিকিসকের ভূল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যু ॥ একটি হাসপাতালে হামলা, আরেকটিতে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদীতে ভূয়া এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ডা. রাজিয়া সুলতানা নামে ভূয়া চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে মৃত নবজাতকের স্বজনরা হামলা চালিয়ে হাসপাতাল ভাঙচুর ও চিকিৎসককে লাঞ্চিত করেছে। এক পর্যায়ে চিকিৎসক রাজিয়া হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। অপরদিকে আরেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় একই দিনে চিকিসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ৪ জনকে আসামি করে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে মামলা দায়ের করেছে মৃত শিশুর বাবা মো. মাসুম হাওলাদার। আদালতের বিচারক মো. শিহাবুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে তদন্ত পূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের বাটাজোর গ্রামের সুজন হাওলাদার(৩২)র অন্তঃসত্বা স্ত্রী বিলকিস আক্তার(২৩) গৌরনদীর বাটাজোর বন্দরের এ্যাপোলে প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুলতানা রাজিয়া তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নেন। গত ২৮ নভেম্বর এ্যাপোলে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা জানান, আজই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওই দিনই বিলকিস আক্তারকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তির পর রাত সোয়া ৭টায় বিলকিসকে অস্ত্রপাচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।
বিলকিস আক্তারের স্বামী সুজন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ভূয়া চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা ভুল অপারেশন করে নবজাতকের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাত করে। এতে রক্তক্ষরনে শিশুটি জন্মের পরপরই মারা যায়। প্রতারক চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা শিশুটি মারা যাওয়ার কথা গোপন রেখে তাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ নেন। চিকিৎসকের পরামর্শে এ্যাম্বুলেন্সযোগে শিশুটিকে বরিশাল নেওয়া হলে জরুরী বিভাগের চিকিসক জানান, শিশুটি জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, ভূয়া ডাক্তার আমার নবজাতক শিশু পুত্র সন্তানকেই হত্যা করেনি তার ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি ভূয়া চিকিৎসকের বিচার চাই।
বাটাজোর গ্রামের আরিফুর রহমান, জাহাঙ্গীর হোসেন, মোতালেব সরদার জানান, ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রোগীর স্বজনারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ্যাপোলো হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে চিকিৎসককে লাঞ্চিত করে। এক পর্যায়ে চিকৎসকে মারধর করতে গেলে চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা পালিয়ে রক্ষা পান। অভিযোগের ব্যপারে রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হাসপাতালের একটি সূত্র জানান, ঘটনার পর থেকে চিকিৎসক গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে রাজিয়ার স্বামী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্ত্রীর কাছে শুনেছি পানি শুন্যতার কারনে শিশুটির মারা গেছে। ছুরিকাঘাতের রক্তক্ষরনে মারা যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এ্যাপোলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল আমিন শিশুটি মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে হাসপাতালে হামলা ভাঙচুরের কথা অস্বীকার করেন।
অপরদিকে গৌরনদীর বেজগাতি এলাকার সুইচ হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের (রাজিয়া সুলতানা) ভুল চিকিৎসায় আরেক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আদালতে মামলা দায়ের করেছে মৃত শিশুর বাবা মো. মাসুম হাওলাদার। মামলায় চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা, সুইচ হাসপালের ব্যবস্থাপনা চেয়ারম্যান আজাদ আকন, তার স্ত্রী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপা বেগম, কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আকনসহ চার জনকে অসামি করা হয়েছে। মামলার বাদি গৌরনদীর কসবা গ্রামের মো. মাসুম হাওলাদার উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী নিলুফা বেগম অন্তঃ সত্তা হলে গত ৯ অক্টোবর সুইজ হাসপাতালে চিকিৎসক ডা. রাজিয়া সুলতানা সুলতানরার অধীনে ভর্তি হন। এসময় পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক জানান, রোগী জরুরী ভিত্তিতে সিজার করতে হবে। এজন্য ক্যাসে ১৪ হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। মাসুম ১৪ হাজার টাকা ক্যাসে জমা দেন। মাসুম অভিযোগ করেন, ভূয়া চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা নবজাতককে টানা হেচরা করে জোরপূর্বক বের করতে গিয়ে সন্তানটিকে মেরে ফেলে। তার স্ত্রী মারাত্মকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এসময় আসামিরা প্রসূতি মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা নেওয়ায় মামলা করতে বিলম্ব হয়। আদালতের বিচারক মো. শিহাবুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জনকে তদন্ত পূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।