গৌরনদী
গৌরনদীতে বিয়ের পিড়িতে নবম শ্রেনির ছাত্রী, বন্ধ হবে কি বিয়ে ?
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলা খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খাঞ্জাপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ীর কন্যা ও খাঞ্জাপুর পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্রীকে জোর পূর্বক দিতে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেন অভিভাবকগন। অবশেষে সহপাঠীদের সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে আপাতত রক্ষা পেল মেয়েটি। কিন্তু গোপনে বিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে বলে গ্রামবাসী জানান। তাদের প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ হবে কি? ।
স্থানীয় লোকজন, সহপাঠী ও স্বজনরা জানান, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নেরপশ্চিম খাঞ্জাপুর গ্রামের মো. শহীদ হাওলাদার তার কন্যা খাঞ্জাপুর পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্রী(১৪)র জন্য একই গ্রামের মো. আবদুল আলীমের পুত্র সৌদীপ্রবাসী মোঃ নুর আলম(২৭)র সঙ্গে বিয়ের কথা পাকা করেন। দুই পরিবারের সিদ্বান্ত মোতাবেক গত শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়। সিদ্বান্ত অনুযায়ী অনুষ্ঠানে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বিবাহ রেজিষ্টার(কাজী) মো. বেলাল হোসেন উপস্থিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত কয়েকজন অতিথি জানান, প্রায় শতাধিক আত্মীয়স্বজন ও এলাকায়র গন্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রন জানানো হয়। শুক্রবার দুপুরে বর পক্ষসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যহ্ন ভোজ শেষে বিয়ে রেজিষ্টারী করার কাজ শুরু করা হয়। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের গৌরনদী উপজেলা সমন্বয়কারী আব্দুর কাদের জানান, কনের কয়েকজন সহপাঠী ও নাগরিক ফোরামের একাধিক সদস্য বাল্য বিবাহ আয়োজনের বিষয়টি তাদের সংগঠনের মাঠকর্মিকে জানান। মাঠকর্মি খোজ নিয়ে বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাদকে অবহিত করেন। কনের একাধিক সহপাঠী জানান, তাদের বান্ধবী বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু তার মা বাবা বিদেশী বর পেয়ে কনের অমতে বিয়েতে বাধ্য করে জোরপূবর্ক বিয়ের ব্যবস্থা করেন। খাঞ্জাপুর পাঙ্গাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, নবম শ্রেনির ওই ছাত্রীর জন্ম ২০০২ সালে মে মাসে। তার বয়স মাত্র ১৪ বছর তাকে বিয়ে দেওয়া চরম অন্যায়।
খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাদ বলেন, আমাকে পূর্বেই আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফিরে আসি। পরে জানতে পারি কনের বিয়ের বয়স হয়নি। বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করা নিয়ে এলাকায় বিভিন্ রকম কানা ঘুষাসহ বিরোধপূনর্ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তখন আমি খোজ খবর নিয়ে বয়সের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। কনের একাধিক স্বজন জানান, তারা আগেই কনের বাবাকে বিয়ে দিতে নিষেধ করেছিল কিন্তু কনের বাবা তাদের নিষেধ শোনেননি। তারা আরো বলেন, আপাতত বিয়ে বন্ধ হয়েছে। এটাই শেষ কথা নয়, বর ও কনের বাবারা গোপনে বিয়ে সম্পন্ন করার পায়তারা চালাচ্ছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সদস্য হেলেনা খাতুন বলেন, আপাতত বিয়েতো বন্ধ হয়েছে সেটা কতক্ষনের জন্য? গোপন বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য দুই পরিবারের অভিভাবদের মধ্যে জোর চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য বরের বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি। কনের বাবা গোপনে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথা অস্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের নিদের্শে বিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফজাল হোসেন বলেন, উপজেলার মধ্যে কোথায়ও বিয়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।