বাকেরগঞ্জে ব্যবসায়ীকে ফ্যাসিস্টের দোসর তকমা দিয়ে চাঁদাদাবি, না দেয়ায় গুলি করে হত্যার হুমকী বৃদ্ধা মাসহ লাঞ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জে এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে  এক কৃষক দল নেতার বিরুদ্ধে। এসময় তাকে বাঁচাতে গেলে তার বৃদ্ধা মাকে লাঞ্চিত করে  ওই কৃষক দল নেতা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের কৃষ্ণকাঠি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনার পর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভূক্তভোগী মহসিন বিশ্বাস ও তার পরিবার।

ভূক্তভোগী মহসিন বিশ্বাস জানান, ৫ আগস্টের পর উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস তার কাছে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে এলাকা ছাড়া করাসহ দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে আসছিল। ব্যবসায়ী মহসিন বিষয়টি জেলা বিএনপি ও কৃষক দলের শীর্ষ নেতাদের অবহিত করেন। এতে আরো ক্ষুদ্ধ হয় জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। গত বুধবার রাত ৯ টার দিকে মহসিন তার বাড়ির সামনের রাস্তায় এক প্রতিবেশীর সাথে কথা বলছিলেন। ঘটনাক্রমে ওই পথ দিয়ে মোটর সাইকেলে যাচ্ছিলেন জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। তাকে দেখে মোটরসাইকেল থামিয়ে মহসিনকে গালাগাল শুরু করে । মহসিন প্রতিবাদ করলে তাকে গুলি করে ঝাঁজড়া করে দেওয়ার হুমকী দেয় কৃষক দল নেতা। এসময় মহসিনের সাথে থাকা ওই প্রতিবেশী গালাগালের কারন জানতে চাইলে কৃষক দল নেতা জাহাঙ্গীর বলেন, ও (মহসিন) আওয়ামী লীগ করে। ওকে এলাকায় থাকতে দেয়া হবেনা।

এসময় ওই প্রতিবেশী মহসিনের কোন অপকর্ম আছে কিনা জানতে চাইলে সে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। বুধবার রাতের ওই ঘটনা মহসিন আবারো জেলা কৃষকদলের শীর্ষ নেতাদের অবহিত করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহাঙ্গীর  ও তার সহযোগীরা মহসিনের বাড়ির সামনে গিয়ে তাকে গালাগাল করে এবং ফের হত্যার হুমকী দেয়। এসময় মহসিনের মা বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম প্রতিবাদ করেন এবং মহসিনের কি অপরাধ জানতে চান। জাহাঙ্গীর মহসিনের কোন অপরাধ না বলে সে (মহসিন) সে আওয়ামী লীগ করে বিএনপি করেনা বলে জানান। এসময় নুরজাহান বেগমের সামনে মহসিনকে মেরে ফেলার হুমকী দেয় সে। নুরজাহান বেগম এর প্রতিবাদ করলে তাকে এবং মহসিনকে শারিরীক ভাবে লাঞ্চিত করে সে। এসময় আসপাশের বাসিন্দারা ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও ভয়ে কেউ তাকে নিবৃত্ত করেনি।  ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী মহসিন বিশ্বাস বলেন, তিনি কখনো আওয়ামী লীগ কিংবা এর কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন পদে ছিলেননা এবং এর রাজনীতির সাথেও কখনো জড়িত ছিলেননা। তাকে হেনেস্তা করতেই আওয়ামী লীগ তকমা দেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীক কারনে এলাকার বাইরে অবস্থান করায় এই এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোন অন্যায় কিংবা অপকর্মের কোন অভিযোগ নাই।  এছাড়াও এলাকায় তরমুজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী সহ বিভিন্ন জনের সাথে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এর আগে ২০০১ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সভাপতি মাহমুদ খান সুমনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. লতিফ খানকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মারধর করা সহ প্রস্রাব খাওয়ানোর অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বাকেরগঞ্জ উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, বিগত দিনে মহসিন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। ৫ আগস্টের পর তাকে আমি বরিশাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসি।  কিন্তু বর্তমানে সে আমার বিরুদ্ধ কেন অপপ্রচার চালাচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। আমি তার কাছে কোন চাঁদা দাবি করি নাই। এলাকায় আমার নামে কোন অভিযোগ নাই। এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বরিশাল জেলা কৃষকদলের আহবায়ক মোহসিন আলম জানান, ঘটনাটি আমি জেনেছি। তাকে (জাহাঙ্গীর) বরিশালে ডেকেছি। বিষয়টি শুনে আমি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।