প্রধান সংবাদ
উজিরপুর জমি দখলে স্কুল ছাত্রছাত্রী ব্যবহারের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ভিক্টোরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের কোমলমতি ২/৩ শ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে রোববার শোলক গ্রামে হামলা চালিয়ে দুটি পরিবারের বসতঘর ভিটেমাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে জমি দখল করার অভিযোগ পাওয়া গছে। এ সময় বাড়ির লোকজনকে পিটিয়ে জখম ও ঘরের মালামাল লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সোমবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও পুলিশ জানান, ১৮৯৯ সালে কলকাতার মহারানী ভিক্টোরিয়ার নাম অনুসারে উজিরপুর উপজেলার শোলক গ্রামের জমিদার মনোরঞ্জন মুখার্জী জমি দান করে জমিতে ‘শোলক ভিক্টোরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার মনোরঞ্জন মুখার্জী তার সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য ৮০ বছর আগে মৃত আসমত আলী হাওলাদারকে ৪০ শতাংশ জমি ভোগ দখল বুঝিয়ে দেন। বর্তমানে ওই জমিতে আসমত আলী হাওলাদারের উত্তরসুরী দুই কন্যা ফিরোজা বেগম (৭৫) ও উজিরন বেগম (৭০) তাদের পুত্র ও নাতিপুতি নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। কিছুদিন ধরে শোলক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য প্রভাবশালী আফজাল হোসেন ও তার ভাই আসাদুর রহমান জমি দখল নেওয়ার পায়তারা করে। জমি দখল করতে ব্যার্থ হয়ে আফজাল হোসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে লিজ পত্র নেন। প্রত্যক্ষর্শী গ্রামের লোকজন জানান, রোববার সকালে আফজাল হোসেন, প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন ও সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের ২/৩ শ ছাত্রী ছাত্রী, কমিটর সদস্য ও শিক্ষকরা জোর পূর্বক জমি দখল নিতে আসেন।
মৃত আসমত আলীর মেয়ে শোলক গ্রামের সিদ্দিক হাওলাদারের স্ত্রী হতদরিদ্র ফিরোজা বেগম জানান, তারা দুই বোন পৈত্রিক সূত্রে জমিতে ৭০/৮০ বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিল। কিছুদিন ধরে আফজাল মেম্বর বাড়ির লোকজনকে উচ্ছেদ করে দখল নেওয়ার পায়তারা চালিয়ে ব্যথর্ত হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে ওই জমি স্কুলের বলে দাবি করেন। তাদের কাছ থেকে নিজে জমি লিজ নেন সুচতুর আফজাল মেম্বর। ফিরোজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রোববার সকালে আফজাল হোসেন, প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন ও সভাপতি জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের ২/৩ শ ছাত্রছাত্রী নিয়ে বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। এতে আমরা বাধা দিলে পিটিয়ে ও কুপিয়ে বোন উজিরন বেগম (৭০), স্বামী সিদ্দিক হাওলাদার (৭৫), পুত্র ইমন হাওলাদার (১৮)সহ ৪জনকে জখম করেছে। হামলাকারীরা প্রায় ৩/৪ ঘন্টায় দুই পরিবারের বসতঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়। আসমত আলীর আরেক মেয়ে উজিরন বেগম কাদতে কাদতে বলেন, মোর বাবা মা ওই বাড়িতে 90 বছর বসবাস করে মারা যায়। মোগো দুই বোনের জন্ম হয় ওই বাড়িতে। গত ৭০/ ৭৫ বছর যাবত মোরা স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করি। এত বছরের সংসার ছাত্রগো দিয়ে শেষ কইররনা দিল। এ্রাহন মোরা কই যামু। শিক্ষিক মানুষ হইয়া স্যারেরা অশিখিতের মত কাম করছে। দেশে কোন আইন বিচার নাই। মোগো গরীবের উপর জুলুম কইররা বাড়িঘর ভাইঙ্গা দহল নিল, কেউ দেহার নাই।
গ্রামের প্রবীন নাজমুল নাহার বেগম জানান, এ পরিবার দুটি বিগত আশি বছর পূর্ব থেকে এখানে বসবাস করে আসছেন। সাবেক ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন ও তার সহদর আসাদুর রহমান জমি দখল নিতে ব্যর্থ হয়ে স্কুলকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে হামলা চালিয়ে দুটি পরিবারকে নিঃশ্ব করে দিয়েছে। স্কুলের বৈধ জমি হলে আইন আছে, আদালত আছে তা ব্যবহার করে দখল নিতে পারত। কিন্তু তা না করে গায়েরে জোরে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করে জমি দখল করেছে। এতে শিক্ষকরা শুধু অন্যায়ই করে নাই কোমলমতি শিশুদের অন্যায় কাজে ও উশৃংলতায় উৎসাহিত করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির মালিক স্কুল দখলদারদের অন্যত্র চলে যেতে বলা হলে তারা কোন কর্নপাত করেনি। পরবর্তিতে জমি লিজ দেয়া হয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটি অভিভাবকরা মাইকিং করে জমি উদ্ধারে ছাত্র ছাত্রীদের আহবান করে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুলের জমি দখলমুক্ত করেছে। এর সাথে আমি জড়িত নাই। জমির বৈধ মালিক স্কুল হলে আইন প্রশাসনকে বাদ দিয়ে বিনা নোটিশে ছাত্রছাত্রী দিয়ে হতদরিদ্র দুটি পরিবারকে নিঃশ্ব করা কতটা মানবিক জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিদ্যালয় পরিচালণা কমিটির সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার সাথে আমি সম্পৃক্ত না। অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের জমি দখলমুক্ত করেছে। লুটপাটের অভিযোগ সত্য না। উজিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে বেআইনিভাবে বাড়িঘর ভাঙচুর করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিযে দুটি হতদরিদ্র পরিবারের বসতঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে তাদের আশ্রয়হীন করেছে যা খুবই অমানবিক । এ ঘটনায় সোমবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।