গৌরনদী
ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী ॥ গৌরনদী যুবউন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
মোঃ খায়রুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক,
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে শিক্ষত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর ৪র্থ পর্বের আওতায় তিনমাস ব্যাপি মৌলিক প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়। বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় প্রকল্পের প্রশিক্ষন কোর্সে গৌরনদী উপজেলা যুবউন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা ।
ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী প্রকল্পে সংশ্লিষ্টরা জানান, গৌরনদী উপজেলায় ৯১৯ জন শিক্ষত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের লক্ষে মার্চ, এপ্রিল ও মে তিন মাসের প্রশিক্ষনের আয়োজন করা হয়। প্রশিক্ষনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,মৎস্য, কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়য়ের উপরে প্রশিক্ষন দেওয়ার জন্য ৩২ জন প্রশিক্ষক নির্বাচিত করা হয়। প্রতিদিন সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৪টি ক্লাস নেওয়া হয়। প্রশিক্ষকদের জন্য প্রতি ক্লাসে ৫০০ টাকা ভাতা বরাদ্ধ করা হয়। প্রশিক্ষকদের জন্য ১৪ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষনের উদ্ধোধনী ও সামাপনী অনুষ্ঠানের জন্য আরো ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, গৌরনদী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রশিক্ষন কোর্সে চরম অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করেন। শুধু তাই নয় তিনি প্রশিক্ষকদের পাওনা টাকা না দিয়ে এবং নামে বেনামে প্রশিক্ষক হাজিরা দেখিয়ে বরাদ্দকৃত ১৪ লাখ টাকা থেকে কয়েক টাকা আত্মসাত করেছেন। প্রতিদিন সরকারি নির্দেশনায় ৪টি ক্লাস নেওয়ার কথা থাকলেও সিদ্দিকুর রহমান প্রতিদিন ৮টি কোন কোন মাসে প্রতিদিনে আরো বেশী ক্লাস নেওয়ায় নিজ হাজিরা দেখান। তিনি প্রশিক্ষকালীন তিন মাসে নিজে ৫৫২টি ক্লাস দেখিয়ে ২লাখ ৭৬ হাজার টাকা প্রশিক্ষক সম্মানী ভাতা গ্রহন করেন। (মার্চ মাসে ১৬০টি, এপ্রিল ও মে মাসে ১৯৬টি করে ক্লাস নেন)। এছাড়া জাকজমকপূর্ন উদ্ধোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ করা হয়। জাকজমকপূর্ন অনুষ্ঠান না করে মাত্র দুটি ব্যানার বাবত ১ হাজার টাকা ব্যায় বাকি ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন।
গৌরনদী উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রশিক্ষক ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান তাদের নামে বরাদ্ধকৃত ভাতার সামান্য অংশ দিয়ে সাদা সিটে স্বাক্ষর নিয়ে অধিকাংশ ভাতা নিজেই আত্মসাত করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গৌরনদী উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আশুতোষ রায় মার্চ মাসে ৪২, এপ্রিল মাসে ৪৮ ও মে মাসে ৩৯টিসহ মোট ১২৯টি ক্লাস নেন। তিনি জানান, সিদ্দিুর রহমান তার ভাতা প্রাপ্তি সিটে টাকার অংক না লিখে ৭০টি ক্লসের ভাতা হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা নিজেই আত্মসাত করেন। গৌরনদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকতা মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ করেন, সিদ্দিকুর রহমান ভাতা গ্রহন সিটে টাকার অংক না লিখে স্বাক্ষর নেন। তিনি তিন মাসে ৮৬ টি ক্লাশ নেন সেখানে তাকে ৫২টি ক্লাশ বাবদ ২৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নজরুল ইসলাম মার্চ মাসে ৪৩, এপ্রিল মাসে ৩৬ ও মে মাসে ২৪টি মোট ১০৩টি ক্লাশ নেন অথচ সাদা সিটে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে মাত্র ৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম, গৌরনদী গালর্স স্কুল অ্যা- কলেজের প্রভাষক বিশ্বজিৎ বকসীসহ অনেকেই একই অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, গত তিন মাসে আমি দেড় শতাধিক ক্লাস নিয়েছি। সেখানে যুব উন্নয়ন অফিসার আমাকে মাত্র ২৯ হাজার দিয়েছে। গৌরনদী উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম বলেন, আমার নামে ২৮ হাজার টাকা ভাতা উত্তোলন করে আমাকে মাত্র ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আরেক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. বদিউজ্জামান বলেন, আমি তিন মাসে ৫৬টি ক্লাশ নিয়েছি এবং যুব উন্নয়ন অফিসার আমার নামে ২৮ হাজার টাকা উত্তোল করে আমাকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাত করেছে। গৌরনদী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সটেক্টর বিপ্লব চন্দ্র বড়াল অভিযোগ করে বলেন, আমার নামে ১৮ হাজার ৫শত টাকা ভাতা তুলে আমাকে মাত্র ২হাজার টাকা দেওয়া দিয়ে বাকি টাকা যুব উন্নয়ন অফিসার আত্মসাত করেছে।
অভিযোগের ব্যপারে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রত্যেক প্রািশক্ষককে হাজিরা অনুযায়ী ভাতার টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযোগের কোন সত্যতা নাই। গৌরনদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী এ প্রসঙ্গে বলেন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রশিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারনা করেছে। ভাতা প্রাপ্তি সাদা সিটে স্বাক্ষর নিয়ে প্রশিক্ষকদের টাকা আত্মসাত করেছে বলে শুনেছি। মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে সিদ্বান্ত গ্রহন করা হবে।