প্রধান সংবাদ
উজিরপুরে পাগলির পুত্র সন্তান প্রসব
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা-বরিশাল মহা সড়কের উজিরপুর উপজেলার ইচলাদীর টোলপ্লাজা এলাকায় সোমবার গভীর রাতে ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞতনামা এক নারী (৩০)। নবজাতক প্রসবের পর পরই উজিরপুর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আঁখি শেখ (৩৫) মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ও তার নবজাতককে উদ্ধার করে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন।
উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রাখাল বিশ্বাস জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উজিরপুর পৌর সভার সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় কাউন্সিলর আঁখি শেখ (৩৫)সহ কতিপয় স্থানীয়রা অজ্ঞাতনামা মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি নারী ও পুত্র সন্তন নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এ সময় তারা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি নারী কিছু সময় আগে মহা-সড়কের পাশে ইচলাদী টোল প্লাজায়র সামনে এক ফুট ফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছ। তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।
মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞতনামা নারী (৩০) ও নবজাতক উদ্ধারকারী উজিরপুর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আঁখি শেখ বলেন, আমি বাড়ি যাওয়ার পথে পাগলির সন্তান প্রসবের কথা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে প্রসূতি মা ও সন্তানের মাটিতে গড়াগড়ি ও বাচ্চার কান্না দেখতে পেয়ে আমার খুবই খারাপ লাগে। তখন তড়িঘড়ি করে উভয়কে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। মা সন্তানের অবস্থা দেখে যতটা খারাপ লেগেছে তার চেয়ে বেশ খারাপ লেগেছে এই ভেবে যে, এই সমাজে একটা পাগলের নিরাপত্তা নাই। পাগলির যদি অনুভূতি থাকতে তাহলে সে মাতৃত্বের স্বাদ নিত কিন্তু তা না করে পাগলি সন্তানটি মাটি কাদার মধ্যে ফেলে রাখে। এ দৃশ্য দেখার পরে আমার কান্না চলে আসে।
উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রাখাল বিশ্বাস বলেন, যখন পাগলিরসহ নবজাতককে হাসপাতালে আনা হয় তখন নবজাতকটি কাদা মাটিতে জর্জরিত ছিল এবং চোখে ধূলা যাওয়ার কারনে অনেকটাই অসুস্থ্য হয়ে শিশুটি কাঁদছিল। নার্সরা তাৎক্ষনিকভাবে নারীকে চিকিৎসা নেবা দিয়ে সুস্থ্য করে তোলেন এবং শিশুটিকে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে বেডে ভর্তি করি। মা ও সন্তান উভয়ই সুস্থ্য ছিল। ঘটনা জানাজানি হলে হাসপাতালে উৎসুক জনতার ভীড় জমে। খবর পেয়ে অনেক নিঃসন্তান দম্পতি নবজাতককে দত্তক নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভীড় করে। রাত ২টার দিকে পাগলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নার্সদের চোখ ফাকি দিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। শিশুটি এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাকে গুড়া দুধ কিনে খাওয়ানো হচ্ছে। তবে নবজাতকটি সম্পূর্ন সুস্থ্য আছে। বিষয়টি উজিরপুর মডেল থানাকে অবহিত করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, মানসিক ভারসাম্যহী ওই নারী দীর্ঘদিন ধরে উজিরপুর উপজেলার ইচলাদী ও তার আশপাশ এলাকার হাট বাজারে ঘোরাঘুরি এবং রাত্রিযাপন করে আসছিল। সন্তান জন্মের পরে গাগলিকে সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করলে পাগলি বলে “কার সন্তান কে জন্ম দিয়েছে। এটা তার সন্তান নয়” ।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান জানান, সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক জন্মের পর মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলি ) সোমবার রাতে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে। নবজাতক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হেফাজাতে হাসপাতালে রয়েছে। অনেকেই দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আইনগতভাবে শিশুটিকে দত্তক হিসেবে হস্তান্তর করা হবে।