গৌরনদী
গৌরনদীতে দাদন ব্যবসায়ীর লাঞ্চলার শিকার যুবকের আত্মহত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক, চড়া সুদে টাকা এনে দিতে না পারার অপরাধে দাদন ব্যবসায়ীর লাঞ্চনার শিকার যুবক অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের ধানডোবা গ্রামে। লাঞ্চনা সইতে না পরে অপমানে গত শুত্রবার রাতে বিষপান করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর রাতে মারা যান বিমল বাছার নামের যুবক। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনার পরপরই গ্রাম্য সুদি মহাজন সোহেল চৌকিদার বসতঘর তালাবদ্ধ করে স্ব-পরিবার পরিবার নিয়ে আত্মগোপন করেছে।
স্থানীয়রা জানান, গৌরনদী উপজেলার উত্তর ধানডোবা গ্রামের মৃত শ্রী চরন বাছারের ছেলে দিন মজুর বিমল বাছার (৩৫) স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে পরিবার। করোনা শুরু থেকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় গত প্রায় দুই বছর পর্যন্ত অর্থ অভাবে খুবই কষ্টে দিন কাটছিল। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কোন রকম দিন পার করে। বিমল বাছারের বড় ভাই বাবুল বাছার (৫২) জানান, করোনা শুরু হওয়ার কিছুদিন পরে ছোট ভাই বিমল গ্রামের সুদি মহাজন সোহেল চৌকিদারের (৩৭) কাছ থেকে চার হাজার টাকায় মাসে এক হাজার টাকা লভ্যাংশ দিতে রাজি হয়ে ৪ হাজার টাকা গ্রহন করেন। গত এক বছরে মহাজনের লভ্যাংশ হিসেবে সোহেল চৌকিদারকে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। গত তিন মাস যাবত সোহেলকে তার লাভের টাকা দিতে না পারায় সোহেল চকিদার ক্ষিপ্ত হন এবং মূল চার হাজার টাকা পরিশোধের জন্য বিমলকে চাপ দেন।
বিমল বাছারের স্ত্রী অর্চনা রানী (৩০) অভিযোগে জানান, সুদি মহাজন সোহেল চৌকিদার পাওনা টাকার জন্য চাপ দেন। টাকা দিতে না পারায় শুক্রবার রাতে সোহেল চৌকিদার তার সহযোগী লোকজন নিয়ে বাড়িতে আসেন এবং স্বামী বিমল বাছারের কাছে টাকা ফেরত চান। এ সময় স্বামী বিমল টাকা নাই এবং এখন দিতে পারবো না বললে তাকে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে লাঞ্চিত করে। এ সময় ঘরের মহিলারা প্রতিবাদ করলে তাদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে বসতঘরে তালা দেয়ার হুমকি দেন সোহেল। স্ত্রী অর্চনা রানী (৩০) কাঁদতে ক্াঁদতে বলেন, অপমান সইতে না পাইরররা মোর স্বামী ওই দিন রাইতে ঘরে থাকা কীটনাশক খাইয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্বজনরা জানান, মূমূর্ষ অবস্থায় রাতেই তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর রাতে বিমলের মৃত্যু হয়।
দাদন ব্যবসায়ী সোহেল চৌকিদারের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি। রোববার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে বসতঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বাড়ির লোকজন জানান, বিমল বাছারের মৃত্যুর খবরের পর থেকে সোহেল চকিদার বসত ঘরে তালাবদ্ধ করে পরিবার নিয়ে আত্মগোপন করেছে।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরন করেছে। ময়না তদন্ত শেষে রোববার বিকেলে পরিবারে কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।