গৌরনদী
উজিরপুরে খালে বাঁধ নির্মান, বোরো চাষ ব্যহত
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের ধামুরা-চৌমোহনী খালের দক্ষিন কাংশী মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করেন বরিশাল এলজিইডিরি এক ঠিকাদার। ঠিকাদারের গাফলতি ও খাম খেয়ালীপনায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে পড়েছে ৭টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার কৃষক। ব্যাহত হচ্ছে ১০টি সেচ প্রকল্পের প্রায় ৫ হাজার একর জমির বোরো চাষ। জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ অপসারনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।
ভূক্তভোগী কৃষক, এলজিইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের ধামুরা-চৌমোহনী খালের দক্ষিন কাংশী মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিনের পুরাতন একটি সেতু ছিল। সেখানে ১৫ মিটার দৈঘ্যের গার্ডার সেতু পুন নির্মানের জন্য বরিশাল এলজিইডি আইবিআরপি প্রকল্পের অধীনে ২০১৯-২০২০ইং অর্থ বছরে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ৬৪ টাকা একটি প্রকল্প গ্রহন করেন। ওই অর্থ বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিইডি দরপত্র আহবান করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর মেসার্স রুপালী কনাষ্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তব্য়ান চুক্তি অনুযায়ি ২০২১ সালের ১৮ জুলাই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার ৯ মাসের কাজ দেড় বছরেও শেষ করতে পারেননি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার দেড় বছর আগে প্রকল্প স্থানের খালের মধ্যে দুটি বাঁধ নির্মান করে খালে পানি চলাচল বন্ধ করে দেন। নির্মান কাজ শুরু করার পরে কয়েকটি গার্ডারের কাজ করে প্রায় এক বছর পর্যন্ত নির্মান কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার। নির্মান কাজ শেষ করতে ঠিকাদার গাফলতি ও খাম খেয়ালীপনা করে আসছে। চলতি বছর বোরো মৌসুম শুরুর অনেক আগে থেকেই তারা নির্মান কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তু ঠিকাদার তোয়াক্কা করেনি। পরবর্তিতে বোরো মৌসুম শুরু হলে এলাকার বোরো চাষী ও সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বাঁধ অপসারনের করতে বার বার তাগিদ দিলেও ঠিকাদার খালের মধ্যে বাঁধ অপসারন না করে চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। বিষয়টি চাষীরা উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের ধামুরা-চৌমোহনী খালের দক্ষিন কাংশী মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় খালের মধ্যে দুটি বাঁধ দেয়ায় খালে পানি চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রকল্প স্থানে বাঁধ দিয়ে মাটি কেটে রাখার ফলে আশ পাশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। দক্ষিন কাংশী জামে মসজিদটির ভীত পর্যন্ত ভেঙ্গে গেছে। পাশাপাশি কাংশী উজিরপুর সড়কের কার্পেটিং অনেক অংশ ভেঙ্গে খালে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় স্থানীয় সুরুজ হাওলাদার (৪২) ও মাসুম হাওলাদার (৩৮) অভিযোগ করে বলেন, সেতু নির্মানের শুরু থেকে ঠিকাদার কাজ নিয়ে গাফলতি ও তালবাহানা শুরু করে। শুরুতে কিছু কাজ করে এক বছর ধরে নির্মান কাজ বন্ধ রেখেছে। আমরা বার বার ঠিকাদারকে কাজ শেষ করার কথা বললেও তিনি খামখেয়ালী করে বলেন আমাদের কথায় নয় তার ইচ্ছা ব্রিজের কাজ শেষ করবেন। কৃষক জোনাব আলী, সোহরাব হোসেনসহ অনেকেই বলেন, চলতি বছর বোরো মৌসুম শুরুর অনেক আগে থেকেই আমরা নির্মান কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করি কিন্তু ঠিকাদার আমাদের তোয়াক্কা করেনি। পরবর্তিতে বোরো মৌসুম শুরু হলে আমরা বাঁধ অপসারনের জন্য অনুরোধ করি কিন্তু কোন কর্নপাত করে নাই। বার বার তাগিদ দিলেও ঠিকাদার খালের মধ্যে বাঁধ অপসারন না করে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেয়। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেই কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বোরো চাষী কমলেশ হালদার, হাবিবুর রহমান বলেন, এবারে মোরা বৃষ্টির পানির উপর ভরসা করে বোরো চাষে হাত দিছি। চাষ না করলে খামু কি? খালে বান (বাঁধ) দেয়ায় ম্যানেজার পানি দিতে পারে না। পানির অভাবে জমির ধানের গাছ নষ্ট অইতেছে। এবারে ফসলের কি অবস্থা অইবে জানিনা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও প্রকল্প রব্যবস্থাপকরা রজানান, বাঁধের ফলে সেচ সংকটে পড়েছে ৭টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার কৃষক। ব্যাহত হচ্ছে ১০টি সেচ প্রকল্পের প্রায় ৫ হাজার একর জমির বোরো চাষ। জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ অপসারনের জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
দক্ষিন কাংশী সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোঃ মনির হোসেন বেপারী অভিযোগ করে বলেন, আমার নিজের প্রকল্পের অধীনে ৭হাজার ১শত ৪০ একর জমি রয়েছে। বাঁধের ফলে খালে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকদের পানি সরবারহ করতে পারছি না। বৃষ্টি হলে কিংবা জোবা আসলে কিছু পানি দেই তাতে চাষীদের চাহিদা পুরন হচ্ছে না। বোরো ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং কৃষক মারাতামকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ঠিকাদারের বাঁধ দিয়ে রাখার ফলে বরাকোঠা, কাংশী, বোহরকাঠী, আদাবাড়ি, চৌমোহনী, দক্ষিন কাংশী গ্রামের প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। একই সমস্যার কথা জানালেন কাংশী সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোঃ ইউনুস আলী (৩২), বোহরকাঠী সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আবু তাহের (৪৫)।
অভিযোগের ব্যপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপালী কনাষ্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী অমল দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেয়া হলেও আমি কাজ করি না। আমার লাইসেন্সের নামে কাজ করে অরুন সুমন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ঠিকাদার অরুন সুমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোন সারা পাওয়া যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারের গাফলতির কথা স্বীকার করে বরিশাল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ মো.জামাল উদ্দিন বলেন, কাজ ফেলে রাখার জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারকে একাধিক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে । তাতে সারা না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজ দ্রæত সম্পন্ন করে কৃষকদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিহা তানজিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষি ও কৃষক আমাদের প্রধান প্রান। কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষনে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। আমি সদ্য যোগদান করেছি বিষয়টি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়ে বাঁধ অপসারন ও কৃষকদের সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।