গৌরনদী
উজিরপুরের সাতলা সেতু দুই দশকেও সংস্কার হয়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কচা নদীর সাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকায় স্বল্প ব্যায় প্রকল্পে নির্মিত আয়রন ষ্টকচারের সেতুটি দুই দশকেও সংস্কার করা হয়নি। সেতুটির রেলিংবিহীন অবস্থায় থাকায় ঝুঁকিতে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। সম্প্রতি সময়ে নদীতে পরে গিয়ে শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ ২০ জন হতাহত হয়েছে। সেতুটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় লোকজন জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্ল্টি কর্মকর্তাদের দ্বারে ঘুরলেও সেতুটি সংস্কার করা হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে সেতুটি সংস্কার করা না হলে প্রানহানির আশংকা রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসি।
বরিশাল এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার কচা নদীর সাতলা ইউনিয়নের সাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকায় ১৯৯৯ -২০০০ইং অর্থ বছরে বরিশাল এলজিইডি স্বল্প ব্যায় প্রকল্পের অধীনে আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে প্রায় ৩শ ফুট দৈর্ঘ ও ও ৮ ফুট প্রস্থ আয়রন ষ্টাকচারের উপরে আরসিসির শ্লাবের একটি সেতু নির্মান করা হয় কিš গত ২০ বছরেও সেতুটি সংস্কার করা হয়নি।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি জানান, জনগুরুত্বপূর্ন এ সেতুটির দুরাবস্থার কথা জানিয়ে সংস্কারের জন্য এলাকাবাসি বিভিন্ন সময় উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অবহিত করেন এবং সেতুটি সংস্কারে ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করেন। কিন্তু তারা ব্যবস্থা নেয়া তো দুরের কথা একবার দেখতেও আসেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ সহিদুল ইসলাম, মোঃ সফিকুল ইসলাম, স্কুল শিক্ষক মোঃ কলিমুল্লাহ জানান, উজিরপুর উপজেলার রাজাপুর, শিবপুর, নয়াকান্দি, বিশারকান্দি, সাতলা, উত্তর সাতলা, দক্ষিন সাতলা ও বানরীপাড়া উপজেলার সিমান্তবর্তি গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ এ সেতু দিয়ে যাতায়াতর করে থাকে। এ ছাড়া উজিরপুর উপজেলার নয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈদ্যবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজাপুর হাইস্কুল, সাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মধ্য রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম দক্ষিন রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু কিশোর শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন সহ¯্রাধিক পথচারী এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। সেতুটির রেলিং না থাকায় জীবনের অত্যাধিক ঝুকি নিয়ে এসব পথচারীরা সেতু পারাপার করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কচা নদীর উপরে নির্মিত বিশাল এ সেতুটির নিজের অংশের আয়রন ষ্টাকচার অনেকটাই দূর্বল হয়ে গেছে। সেতুটির এ্যাংগেল, ওয়াটারবার ও টানা অনেক গুলো খুলে পড়েে গেছে। এতে মূল সেতুটি অনেক ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ন হচ্ছে সেতুটির রেলিং না থাকা। স্বল্প প্রস্থের তিনশত ফুট দৈর্ঘ সেতুটির এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত কোথায়ও কোন রেলিং নেই। পাশাপাশি দুটি ভ্যান বা রিকসা সাইড দিতে গেলে পথচারীরা যে কোন সময় নদীতে পরে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় সুভাষ বৈরাগী, সেফালী রানী, নিরাঞ্জন মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, এ সেতুটি গত বিশ বছর ধরে এ অবস্থায় পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ সেতুটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেননি। আমরা বার বার উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে লিখিতভাবে আবেদন করার পরেও তারা কোন কর্নপাত করেনি। বিভিন্ন সময় সেতু পার হতে গিয়ে রিকসা ভ্যান সাইট দেওয়ার সময় নদীতে পরে একজন নিহতসহ ২০ জন আহত হয়েছে। গত ২০ ফেব্রæয়ারি বিকেল ৫ টায় সেতুর উপর দিয়ে ২টি ভ্যানগাড়ী পাশাপাশি ক্রসের সময় নদীতে পড়ে গিয়ে সাতলা গ্রামের মৃত মোস্তফা বালির পুত্র ও স্থানীয় মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র আঃ কাদের বালি (১২) গুরুতর আহত হয়েছে। সে এখনো উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন হাওলাদার বলেন, সেতু থেকে পড়ে ছাত্র আহত হওয়ার খবর পেয়ে স্থানীয়দের নিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। গত এক সপ্তাহ পূর্বে হারতা গ্রামের এক পথচারী সেতু থেকে পরে গিয়ে গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দীর্ঘ লম্বা সেতুটি রেলিং বিহীন অবস্থায় রয়েছে প্রায় ২০/২২ বছর। এ ছাড়া সেতুর শাøব অনেক অংশে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এলাকাবাসিকে জনদূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটি সংস্কার করার জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষে কাছে বার বার ধর্না দিলেও সংস্কার করা হয়নি। নিরুপায় হয়ে আমি নিজের অর্থায়নে শ্লাপের ফাকা অংশের কিছুটা সংস্কার কাজ করেছি কিন্তু রেলিং করার মত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
উজিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী শেখ আজিমুর রশিদের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলিং না থাকায় সেতুটিতে যাতায়াত অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্নর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সাপোর্টিং ফর রুরাল সেতু প্রকল্পের আওতায় গ্রামীন সেতু সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের অধীনে সেতুটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রæত সংস্কার কাজ করা হবে।