গৌরনদী
গৌরনদীতে ৪৩ দিনের কন্যা শিশু হত্যা, মা গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামে মা কর্তৃক তিন মাসের পুত্র শিশুকে পানির বালতিতে চুবিয়ে হত্যার রেশ কাটকে না কাটতেই উপজেলার বাদুরতলা গ্রামে আবার হিমা আক্তার নামে এক মা তার ৪৩ দিনের কন্যা শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে শনিবার গৌরনদীতে মডেল থানায় স্ত্রীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ সোমবার দিবাগত রাতে হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি মা হিমা আক্তারকে (২৫) গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বরিশাল আদালতে সোপর্দ করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মোঃ মোক্তার মেলকারের পুত্র দেলোয়ার হোসেন ২০১৬ সালে একই উপজেলার পাশ্ববর্তি বাদুরতলা গ্রামের মৃত হালিম আকনের কন্যা হিমা আক্তারকে সামাজিকভাবে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় বারে হিমা আক্তার অন্তসত্ত¡া হলে সে তার মায়ের কাছে বাদুরতলা গ্রামে চলে যান সেখানে ৪৩ দিন আগেএকটি কন্যা সন্তান প্রশব করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গৌরনদী থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলার কমলাপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী হিমা আক্তার সন্তান প্রসাবের পূর্ব থেকেই একই উপজেলার বাদুরতলা গ্রামের বাবার বাড়িতে অবস্থান করে আসছিল। সিজারিয়ান অস্ত্রপাচারের কন্যা শিশু জন্ম নেওয়া পর নাম রাখা হয় খাদিজা ইসলাম রুকাইয়া (বয়স ৪৩দিন)। গত ১৮ ফেব্রæয়ারি সাড়ে ১০টার দিকে মা হিমা আক্তার শিশুকে পুকুরে ফেলে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে মা হিমা আক্তার কন্যা শিশু খাদিজা ইসলাম রুকাইয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে চিৎকার শুরু করলে পরিবারের সদস্যরা খোজাখুজি করে বাড়ির পাশে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত কন্যার বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদি হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস.আই) হারুন অর রশিদ বলেন, ঘর থেকে ৪৩ দিনের শিশু কন্যা হামাগুড়ি দিয়ে পুকুরের পানিতে পড়তে পাড়ে না। শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা নিয়ে তদন্ত শুরু করলে হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়। সোমবার রাতে নিহত শিশুর মা হিমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাবাদ করা হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কন্যাকে পুকুরের পানিতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করে। গৌরনদী থানা হাজতে থাকা হিমা আক্তারের কাছে নিজ সন্তানকে হত্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি স্বপ্নে নির্দেশ পেয়ে ওকে হত্যা করেছি। স্বপ্নে আমাকে বলা হয়, ও থাকলে পরিবারের অকল্যান হবে। এ প্রসঙ্গে মামলার বাদি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী সুস্থ্য ও স্বাভাবিকই ছিল। তার কোন মানুষিক সমস্যা নেই, স্ত্রীর সাথে আমার কোন দাম্পত্য কলহ বা মনমালিন্যও ছিল না কিন্তু কেন সে এ ধরনের কাজ করেছে তা জানি না। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদে হিমা আক্তার সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহনের জন্য পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য গত ১৮ ডিসেম্বর বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বরদুলালী গ্রামে মা ছালেহা বেগম (৩৪) নিজের সাড়ে তিন মাসের ছেলে জুবায়ের তালুকদারকে বালতির পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে। স্বামী সাগির হোসেন তালুকদার বাদী হয়ে তাঁর স্ত্রী ছালেহা বেগমকে একমাত্র আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় মা ছালেহাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে সে সন্তান হত্যার দায় অঅদালতে স্বীকার করে। ছালেহা বেগম বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।


