গৌরনদী
দশ মাসের শিশুর কান্না শুনে পাশে গিয়েই মায়ের লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী- গোপালগঞ্জ সড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল বাইপাশ সড়কের সেতুর পাশের এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে দশ মাসের একটি শিশুকান্না করছিল। স্থানীয়রা শিশুর কান্না শুনে ছুটে গিয়ে পাশেই মায়ের লাশ দেখতে পান । পরে পুলিশকে খবর দিলে ওই রাতেই পুলিশ লাশ ও শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আল আমিন বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার আগৈলঝাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রধান আসামি স্বামী তামিম শেখকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে তামিম শেখ।
বাদি এজাহারে উল্লেখ করেন, তার ছোট বোন রাশিদা বেগমের (৩৫) ১৭ বছর আগে মোকাদ্দেস হোসেন নামে এক যুবকের সাথে প্রথম বিয়ে হয়। ওই ঘরে দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ৫ বছর আগে তাদের মধ্যে বিাবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। পরবর্তিতে ২০১৮ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বেতগ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেন শেখের পুত্র তামিম শেখের (৪২) সঙ্গে বিয়ে হয়। ওই ঘরে তনিম নামের দশ মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তামিম শেখ তার প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গোপালগঞ্জ থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিদাকে নিয়ে আগৈলঝাড়া সদরের বাকাল গ্রামের বসবাস করে আসছিলেন।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্বামী তামিম শেখ স্ত্রী রাশিদা বেগমের মুঠোফোনে কল করে তাকে তাকে গোপালগঞ্জ যেতে বলে। এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিছুটা বাক-বিতান্ডা হয়। পরে বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জ চলে যায়। সেখানে রাশিদাকে হত্যা করে বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে গৌরনদী- গোপালগঞ্জ সড়কের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল বাইপাশ সড়কের সেতুর পাশে হান্নান মোল্লঅর মাছের ঘেরে এলাকায় লাশ ফেলে যায় স্বামী ও তার সহযোগীরা। পাশেই ফেলে যায় দশ মাসের ফুটফুটে পুত্র সন্তান তনিমকে। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে শিশুটি কান্না করছিল। এ সময় স্থানীয়রা শিশুর কান্না শুনে ছুটে গিয়ে পাশেই এক নারীর লাশ দেখতে পান। পরে তারা পুলিশকে খবর দিলে ওই রাতেই আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বাকাল গ্রামের ভবরঞ্জন মন্ডল জানান, গভীর রাতে শিশুর কান্নায় আকাশ বাতাশ ভাড়ি হয়ে গেছে। তখন আমরা উঠে আশপাশে খুজতে গিয়ে তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার উপর ফেলে রাখা শিশুটি দেখতে পাই এবং পাশেই তার মায়ের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশ খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে রাতেই লাশ উদ্ধার করে। নিহতের মা জহুরা বেগম (৬০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, স্বামী তামিম শেখ আমার মেয়ে রাশিদাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে রাতে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে যান।
আগৈলঝাড়া থানা হাজতে থাকা গ্রেপ্তারকৃত রাশিদা বেগমের স্বামী তামিম শেখের কাছে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জাইলে তিনি বলেন, আমার অনুপুস্থিতিতে একাধিক পুরুষের সঙ্গে রাশিদার সম্পর্কে ছিল। নিষেধ করা সত্বেও সে ছিল বেপরোয়া, তাই প্রতিহিংসা থেকে হত্যা করা হয়েছে। আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি) মোঃ মাজাহারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, রাশিদা বেগমকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ বৃহস্পতিবার স্বামী তামিম শেখ আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে স্ত্রী রাশিদা বেগমকে গোপালগঞ্জ ডেকে নিয়ে হত্যার পর বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে আগৈলঝাড়ায় লাশ ফেলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে স্বামী তামিম শেখ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে নিহতের বড় ভাই আল আমিন বাদি হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়েরের পর আসামি গেপ্তার করা হয়েছে। হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য শুক্রবার তামিম শেখকে বরিশাল আদালতে হাজির করা হবে।