বরিশাল
ত্রানের সিলিপ নিয়ে দিনভর দ্বারে দ্বারে ঘুরে রাতে খালি হাতে বাড়ি ফিরলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদের মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার ত্রানের একটি সিলিপ পান বরিশালের প্রত্যন্ত পল্লি উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের দক্ষিন হারতা গ্রামের হতদরিদ্র শামছুল হক বেপারী (৩৫)। সিলিপ নিয়ে দ্বারে দ্বারে দিনভর ঘুরে ত্রান ছাড়াই বৃহস্পতিবার রাতে খালি হাতে বাড়ি ফিরেন শামছুল। ওই দিন তার পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হয়।
শামছুল হক বেপারী জানান, লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে আছেন। মেম্বরের কাছে সাহায্য চাইলে হারতা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার বুধবার সকালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা হিসেবে চালের একটি সিলিপ দেন। সিলিপ নিয়ে তিনি সকাল ১০টায় চালের জন্য হারতা বাজারে লাইনে দাড়ান। বিকেল ৪টায় তাকে জানানো হয় এখন আর চাল নেই দেয়া যাবে না। চাল না পেয়ে সে পুনরায় জাহাঙ্গীর মেম্বরের কাছে গেলে সে হারতা ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ হরেন রায়ের বাড়িতে পাঠান। বাড়িতে গেলে বিকেল সাড়ে ৫টায় চেয়ারম্যানের স্ত্রী বলেন চেয়ারম্যান ঘুমাচ্ছে পরে আসেন। চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে খালি হাতে ফিরে তিনি যান হারতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অমল মল্লিকের কাছে গিয়ে সব খুলে বলেন। অমল মল্লিক শামছুল হককে চাল বিতরন কাজে নিয়োজিত ইউপি সদস্য ফারুক হোসেনকে ফোন দিয়ে সিলিপের চাল দিতে বলেন। সাড়ে ৬টার দিকে সেখানে গেলে ফারুক মেম্বর গুদামের চাবি নেই এখন দেয়া যাবে না বলে তাড়িয়ে দেন। সারাদিনে অনাহারি ক্ষুধার্ত শামছুল হক বিকেল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিলিপ নিয়ে হারতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সুনীল কুমার বিশ্বাসের কাছে যান। এ সময় সুনীল বিশ্বাস তাকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের কাছে যান এবং চাল দেয়ার সুপারিশ করে চলে আসেন। শামছুল হক বেপারী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি মোরে লইয়া পরিষদে যাইয়া চেয়ারম্যানকে সিলিপের চাল দিতে সুপারিশ করায় সভাপতি চইললা গেলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে মোরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মুই খালি হাতে ফিররা আইয়া রাইত সাড়ে ৭টার দিকে ৯৯৯ ফোন দিলে স্যারেরা বলে আমাদের কোন হাত নাই। আপনি থানায় এসে লিখিত দেন। মুই সারা দিন না খাওয়া, মোর ধারে একটি পয়সা নাই, মুই কি দিয়া ১শ টাহা খরচ কইররা উজিরপুর থানায় যাইয়া লিখিত অভিযোগ দিমু। সারা দিন সিলিপ লইয়া ঘুইররা চাল ছাড়া খালি হাতে রাতে বাড়ি যাই।
৯নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার বলেন, আমি যে কয়টি সিলিপ পেয়েছি তা থেকে হতদরিদ্র শামছুল হককে একটি সিলিপ দিছি কেন তাকে চাল দেয়া হয়নি তা আমি জানি না। হারতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সুনীল কুমার বিশ্বাস ও সাধারন সম্পাদক অমল মল্লিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শামছুল হক আমাদেরকে বিষয়টি জানালে আমরা সুপারিশ করেছি তারপরেও কেন সিলিপের চাল দেয়া হয়নি তা বোধগম্য নয়। অভিযোগ সম্পর্কে হারতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ হরেন রায় বলেন, সকালে শামছুল হকের স্ত্রী সিলিপ ছাড়া চাল নিয়ে যায় যে কারনে ওই সিলিপের চাল আর দেয়া হয়নি। গালিগালাজ সম্পর্কে বলেন, শামছুল হক আমাকে বলে কেন চাল দিবেন না চাল আদায় করে নিবো। এ কথার পরে তাকে সাশিয়ে ধমক দিয়ে কথা বলেছি। সভাপতি সুনীল বিশ্বাস শামছুলকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করেছে। হতদরিদ্র শামছুল হক বেপারীর স্ত্রী রহিমা খাতুন (২৭) চেয়ারম্যান হরেন রায়ের চাল নেওয়ার কথা প্রত্যাখান করে বলেন, না খাইয়া পোলাপান লইয়া ঘরে পইররা রইছি কিন্তু মুই জীবনে কোন দিন কারো দুয়ারে সাহায্য চাইতে যাই নাই। চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছে। মুই ঘর থাইক্কাই বাইর হই নাই।