গৌরনদী
কর্মহীন বৃদ্ধার জীবন সংগ্রাম, মানবেতর জীবন ও মানবিক পুলিশের সহায়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক, মরিয়ম বেগম (৭০) ক্ষুধা, দারিদ্রতা, চিকিৎসা সেবার অভাব ও বয়সের ভারে নুজ। এই বয়সে অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ঘরে শুয়ে-বসে বিশ্রামে কাটানোর কথা কিন্তু পেটের ক্ষুধা সে সুযোগ কেড়ে নিয়েছে মরিয়ম বেগমের। ঘরে খাবার নেই তাই জীবিকার তাগিদে কঠোর লকডাউনের মধ্যে ইট ভাঙ্গার কাজে যোগদান করতে হয়েছে মরিয়ম বেগমকে। অসহায় মরিয়ম বেগমের দুরাবাস্থা দেখে সাহায্যের হাত নিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন। বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমকে এক সপ্তাহের বাজার খরজ বাবত আর্থিক সাহায্য দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন তিনি। ওসি আফজাল হোসেনের মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বাউরগাতি গ্রামের হালান সরকারের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৭০) ছিলেন স্বচ্ছল পরিবারের একজন গৃহীনি। চার কন্যা ও স্বামীকে নিয়ে সুখেই কাটছিল তার দিনকাল। মরিয়ম বেগম জানান, স্বামী থাকা অবস্থায় চার কন্যার বিয়ে দেন। পরবর্তিতে স্বামীর রোজগার দিয়ে দুজনের খেয়ে পরে ভালই ছিলেন কিন্তু বিধিবাম স্বামীর মৃত্যুতে মুহুর্তেই তার সুখের সংসার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। ৫ বছর আগে স্বামী হালান সরকার মারা যান। মেয়েদের তেমন স্বচ্ছল পরিবারে বিয়ে হয়নি। তারা নিজেদের সংসার নিয়েই টনাটানিতে আছে তাকে দেখার সুযোগ নেই। স্বামীর মৃত্যুর পরে জীবন বাঁচানোর জন্য নিজেকেই জীবন সংগ্রামে নামতে হয়েছে। মরিয়ম বেগম বলেন, মোর মাইয়ারা নিজেরাই পোলাপান নিয়া চলতে পারে না। মোরে কি কইররা খাওয়াইবে। হেইয়ার লাইগ্যা নিজের জীবন বাঁচানোর লাইগ্যা নিজেই কামে নামছি। গত ৫ বছর ধরে রাস্তার পাশে ইট ভাইঙ্গা যা পাই হেইয়া দিয়া খাইয়া পইররা কোন রকম আছি। দৈনিক কত টাকা আয় হয় জানতে চাইলে মরিয়ম বলেন, সারা দিন ইট ভাংলে ৫০/৬০ টাকা পাই। শরীর ভাল না থাকলে কাম কম করলে ৩০/৪০ টাকা কামাই করি। এতে কি সংসার চলে জানতে চাইলে বলেন, আল্লা চালান।
বার্থী এলাকার আব্দুস সোবাহান (৫৬) ও মোশারফ হোসেন জানান, মরিয়ম বেগম বাউরগাতি গ্রাম থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটর দুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ইট ভাংগার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সারা দিন কাজ করে যা পান তাই দিয়ে সংসার চালান। মহামারি করোনারর লকডাউনে কাজ বন্ধ তার পরেও বৃদ্ধা মরিয়ম প্রতি দিনই রাস্তার পাশে কর্মস্থলে এসে বসে থাকেন। এই বয়সে তার হাতুড়ি জাগানোর শক্তি নেই বললেই চলে তবুও জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য ইট ভাংগার কাজ করেন। তার ভরন পোষন দেয়ার মত কোন কেউ নাই। বার্থী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য বদরুজ্জামান খান বলেন, মরিয়ম বেগম খুবই অসহায়। দুনিয়ার তার ভরন পোষন দেয়ার মত কেউ নেই। ইট ভেঙ্গে সামান্য ৪০/৫০ টাকা যা কামাই করেন তাই দিয়ে চলেন। তার দুরাবস্থা দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা জানান, রোববার সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে লকডাউনের দায়িত্ব পালন করতে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেন। বার্থী এলাকায় পৌছলে মহাসড়কের পাশে বৃদ্ধাকে দেখতে পেয়ে তিনি গাড়ি থেকে নেমে এসে বৃদ্ধার কাছে বিস্তারিত জানতে চান। এ সময় অসহায় মরিয়ম বেগমের কাছে তার অসহায়ত্বের শুনে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং মরিয়ম বেগমের হাতে তুলে দেন ৭দিনের বাজার খরচ বাবত আর্থিক সহায়তা। ওসির দেয়া আর্থিক সহায়তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে মরিয়ম বেগম বলেন, স্যারে মোরো বাজার করতে টাহা দিছে। কয়দিন কাম না কইররা খাইতে পারমু। ওসি আফজাল হোসেন বলেন, কারো মা, কারো দাদির বয়সি ওই অসহায় মরিয়ম বেগমের দুরাবস্থা দেখে সত্যি কষ্ট পেয়েছি। তাই আমার সিমাবদ্ধার মধ্যে থেকেই যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব আমি তাই করেছি। মরিয়ম বেগমের পাশে দাড়ানোর জন্য তিনি সমাজের বৃত্তবাসসহ সমাজ কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।