গৌরনদী
গৌরনদীতে সরকারি ওষুধ পাচার দুই মাসেও রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক,বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি হাসপাতালের লক্ষাধিক টাকার বস্তাভর্তি ওষুধ পাচারের আলোচিত ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও দুই মাসে রিপোর্ট দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে কমিটির এক সদস্য জানান। দুই মাসেও রিপোর্ট দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
গত ৭ মার্চ রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি হাসপাতালের লক্ষাধিক টাকার বস্তাভর্তি ওষুধ গোপন পাচার করছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মাজেদুল কাওসার ও ষ্টোর কিপার সাইদুর রহমান, ষ্টাফ আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ বহিরাগত আরো ৪/৫ জন সহযোগিরা। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখার পরে তারা চ্যালেঞ্জ করলে প্রভাবশালী চিকিসক মাজেদুল কাওছার ভয় বীতি দেখিয়ে জনতাকে সরিয়ে দেন। পরে স্থানীয়রা মিডিয়া কর্মীদের খবর দেন। বিপুল পরিমান সরকারী ওষুধ পাচারের খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বস্তাভর্তি ওষুধ পাচারের ছবি ও ভিওি চিত্র ধারন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের নির্দেশে দুইটি গেট তালাবদ্ধ করে দশজন সংবাদকর্মীকে প্রায় দুইঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে অন্যান্য সংবাদকর্মীরা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত সাড়ে দশটার দিকে অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের উদ্ধার করেছেন। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় সংবাদকর্মীদের ফেসবুক লাইভে বিষয়টি দেখে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে শত শত এলাকাবাসী ও সংবাদকর্মীরা জড়ো হয়ে রাতেই অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইউএনও’র সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস পুরো ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে রাত একটার দিকে উত্তেজিত এলাকাবাসিকে শান্ত করেছেন।
স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা জানান, স্থানীয় লোকজন ঔষাধ আটকের পরে হুমকির মুখে ছেড়ে দিলে তারা সংবাদকর্মীদের খবর দেন। তারা ঘটনাস্থলে পৌছলে ওই রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা হাসপাতালে পৌছে দেখনে পাশের নির্জনস্থানে বিপুল পরিমান ওষুধ পোড়ানো হচ্ছে। এসময় সংবাদকর্মীরা ছবি তুরতে গেলে ডাঃ মাজেদুল কাওসার ও ষ্টোর কিপার সাইদুর রহমান, ষ্টাফ আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ বহিরাগত আরো ৪/৫ জন সহযোগিরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে তারা প্রশাসনকে খবর দিলে ডাঃ মাজেদুল কাওসার ও ষ্টোর কিপার সাইদুর রহমান, ষ্টাফ আনোয়ার হোসেন, খোকন ও দুলালসহ পাচারকারীলা ২০২২ সাল পর্যন্ত মেয়াদের বেশ কিছু সরকারি ওষুধ ফেলে পালিয়ে যায়। কিছুসময় পর সংবাদকর্মীরা হাসপাতাল ত্যাগ করতে গিয়ে দেখতে পায় হাসপাতালের দুইটি গেট তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেন অবরুদ্ধ সংবাদকর্মীরা। ইউএনও ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে থাকেন। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাত সাড়ে দশটার দিকে তালা খুলে দেয়ার পর অবরুদ্ধ সংবাদকর্মীরা মুক্ত হন। পরবর্তীতে ইউএনও’র নির্দেশে থানা পুলিশ তল্লাশী চালিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ার্টারের বাসা, বাসার পাশের ঝোপ জঙ্গল থেকে বস্তা ও কার্টুন ভর্তি পাচারকরা সরকারি ওষুধ ও ইনজেকশন জব্দ করেন। যার প্রত্যেকটির মেয়াদ রয়েছে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য অভিযুক্ত চিকিৎসকদের পক্ষালম্বন করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস ঘটনার পরের দিন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুম বিল্লাহ, সদস্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল জামিল ও গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মাহামুদুল হাসানকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি এক মাস সময় সীমা বেধে দেন। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুম বিল্লাহ, সদস্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল জামিল ও গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ তৌহিদুজ্জামান সরেজমিনে সাক্ষা গ্রহন করেন। এ সময় অবরুদ্ধ সাংবাদিক মাইটিভি’র ও দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন এর গৌরনদী প্রতিনিধি মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া, দৈনিক জনকন্ঠের বরিশালের ষ্টাফ রিপোর্টার খোকন আহম্মেদ হীরা, আনন্দ টিভি’র ব্যুরো প্রধান কাজী আল আমীন, চ্যানেল এস এর ক্যামেরাপারর্সন হাসান মাহমুদের কাছ থেকে ঘটনা শোনেন এবং লিখিত সাক্ষ, ভিডিও ও ছবি গ্রহন করেন। তদন্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও দুই মাসে রিপোর্ট দিতে পারেনি কমিটি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মাজেদুল কাওসার কথা বলতে রাজি হননি। স্টোর কিপার সাইদুল ইসলামের নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ঘটনার সঙ্গে ডাঃ মাজেদুল কাওসার জড়িত বলে জানান। কমিটির আহবায়ব উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুম বিল্লাহ জানান, তদন্ত প্রায় শেষের দিকে খুবই শীঘ্রই রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। সার্বিক বিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবাদকর্মীদের অবরুদ্ধর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করার পাশাপাশি বেশকিছু সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা হাসপাতাল থেকে অসংখ্য ওষুধের কার্টুন ট্রলি ভর্তি করে বাহিরে নেয়ার বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। রির্পোট পাওয়ার পর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হবে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিতে বিলম্ব করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় লোকজন ও অবরুদ্ধ সাংবাদিক সমাজ। অনতিবিলম্বে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে প্রত্যহারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে সাংবাদিকরা তীব্র আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও হুশিয়ারী দিয়েছেন।