গৌরনদী
গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রীরসংবাদ সম্মেলন, আমি সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে চাই
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামে একদল সন্ত্রাসী এক মুক্তিযোদ্ধার অসহায় বিধূবা স্ত্রীর ভিটেমাটি জোরপূর্বক দখল নিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলার ঘটনায় একাধিক মামলা ও দুটি সাধারন ডায়রী করে বিপাকে পড়েছে পরিবারটি। সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে একমাত্র সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং সন্তান ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী রোজিনা সুলতানা। গতকাল রোববার গৌরনদী রিপোটার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অসহায় রোজিনা সুলতানা বলেন, আমি সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে চাই
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোজিনা সুলতানা বলেন, উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ মৌজার আর.এস. সি.এস ও হাল জরিপে ৫৯ শতাংশ জমির মালিক আমার স্বামী ফরিদ উদ্দিন ও তার ভাইয়েরা। আমার স্বামী উক্ত সম্পত্তি গত ৫০ বছর ধরে ভোগ করে আসছিল। ২০১৭ সালের ২৫ জুন আমার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফরিদ উদ্দিন মারা যান। তার মৃত্যুতে পুত্র সন্তানকে নিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়ি। স্বামীর মৃত্যুর পরে মৃত সিরাজ উদ্দিন বেপারীর পুত্র প্রভাবশালী প্রতিবেশী নুর ইসলাম সম্পত্তি দখল নিতে বিভিন্ন অপচেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে আমার ভিটেমাটি দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠে । আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে ভিটেমাটি দখলের পায়তারা শুরু করে । নূর ইসলাম বেপারীন ছেলে ফিরোজ মাহমুদ, বিমান বাহিনীর সদস্য মিরাজ হোসেন ওরফে সিরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ১২/১৫ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা বড় বড় রাম দা, চাপাটি ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িতে তান্ডব চালিয়েছে। সন্ত্রাসীরা আমার জমির গাছপালা কেটে সাবার করেছে। যেন কেউ দেখার কেউ ছিল না। বিশেষ করে নুরুল ইসলামের ছেলে বিমান বাহিনীর সদস্য(এওডিসি) মিরাজ হোসেন ওরফে সিরাজ উদ্দিন গত ২৫ মার্চ ২০২১ইং ছুটিতে বাড়িতে আসার পর থেকে খুবই বেপরোয়া । সে সার্বক্ষনিক ধারাল অস্ত্র বহন করে আমার ওপর হামলার জন্য আমার বসত ঘরের পাশে গাছের আড়ালে ওৎ পেদে থাকে। যখন তখন আমাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য তদন্তে আসলে বিমান বাহিনীল সদস্য মিরাজ তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেছে। এ সময় গ্রামের জামাল বেপারী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে। একজন সরকারি চাকুরীজীবি ছুটিতে এসে এলাকার সন্ত্রাসীদের জড়ো করে আমাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি নিরাপত্তহীনতায় ভূগছি। সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে একমাত্র সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি এবং সন্তান ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে অঅরো বলেন, গত ১৭ মার্চ প্রতিপক্ষ নুর ইসলাম বেপারীর নেতৃত্বে তার ছেলে ফিরোজ বেপারী, মিরাজ হোসেন ওরফে সিরাজ উদ্দিন ভাড়াটে ১০/১২ সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে হামলা করে বসত ঘর ভাঙচুর ও প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। বাড়ির বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ প্রায় ২০/২৫টি গাছ কেটে ফেলে। এ ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে আমি গৌরনদী থানায় গত ২৩ মার্চ একটি মামলা করি। গত ২৯ মার্চ আসামিরা আদালত থেকে জামিয়ে এসে ৩০ মার্চ আমার বাড়িতে পুনরায় দ্বিতীয় দফায় হামলা চালিয়ে ভাতিজা জুয়েল হাওলাদারকে মারধর করে আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমি থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করলে পুলিশ বিষয়টি জিডি হিসেবে গ্রহন করেন। আমি বাড়ি না ছাড়ায় গত ১৬ এপ্রিল সন্ত্রাসীরা বাড়ি দখল নিতে তৃতীয় দফায় হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে নতুবা আমাকে ও আমার কলেজে পড়–য়া ছেলে ফাহিম হাওলাদারকে (১৭) হত্যার হুমকি দেন। হুমকির ঘটনায় গত ২০ এপ্রিল গৌরনদী মডেল থানায় আমি আরেকটি জিডি করেছি। সর্বশেষ যে কথা বলতে চাই, গত ২৫ তারিখ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন নূরুল ইসলামের ছেলে ফিরোজ মাহমুদ। প্রতিবাদ লিপিতে ফিরোজ মাহমুদ মিথ্যাচার চালিয়েছে যার কোন সত্যতা নেই। আমি ফিরোজ মাহমুদের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। দেশের সকল আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে জোর অনুরোধ করছি আপনারা সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সঠিক ঘটনা তুলে ধরে দোসী ব্যক্তিদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির এবং আমাকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উদ্ধারে জন্য দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রোজিনা সুলতানার প্রতিবেশী মোঃ জামাল বেপারী ও হাচান মাহমুদ। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নূরুল ইসলামের ছেলে বিমান বাহিনীর সদস্য মিরাজ হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমার ছুটিতে থাকার বিষয়টি নিয়ে গভীর ষরযন্ত্র উদ্দেশ্যেমূলকভাবে মিথ্যাচার করেছে। সহদর ফিরোজ মাহমুদ বলেন, রোজিনা সুলতানা মুক্তিযোদ্ধার অসহায় বিধবা স্ত্রী ধূয়া তুলে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে ইমোশোনাল বøাক মেইল করে তাদের কাছ থেকে সহানুভূতি ও বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, রোজিনার বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা নেওয়াসহ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে পুলিশের পক্ষ থেকে করনীয় সবই করা হয়েছে।