গৌরনদী
গৌরনদীতে দাবিকৃত যৌতুক না পেয়ে স্ত্রী নির্যাতন, স্বামী গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ৫ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়ার পরেও দাবিকৃত যৌতুকের ৫লাখ টাকা না দেওয়ায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের চাঁদশী গ্রামে মর্জিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ স্বামী নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল মঙ্গলবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
নির্যাতিতার অভিযোগ ও মামলার বিবরনে জানা গেছে, ২০১০ সালে অক্টোবর মাসে গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের আব্দুর রহমান শাহর কন্যা মর্জিনা আক্তার (২৫)র একই উপজেলার চাঁদশী গ্রামের মৃত আব্দুল হকের পুত্র নাসির হাওলাদার(৩৩)র সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কনের পিতা আব্দুর রহমান জামাতা নাসির হাওলাদারকে নগত দেড় লাখ টাকা, স্বর্œালংকার ও আসবাবপত্রসহ প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল যৌতুক দেন।
গৃহবধূর মর্জিনার পিতা আব্দুর রহমান অভিযোগ করেন, বিয়ের পর ৬ মাসের মধ্যে জামাতা নাসির ব্যবসার জন্য নতুন করে ২ লাখ টাকা দাবি করলে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকি ১ লাখ টাকা না দেওয়ায় প্রথম তার কন্যাকে মারধর করা হয়। বিয়ের পরে গত ৫ বছর বিভিন্ন সময় নানান অজুহাতে নগত ৫ লাখ টাকা যৌতুক নেন নাসির হাওলাদার। দাবিকৃত টাকা না দিলেই তার মেয়েকে নির্যাতন করে। এমনকি বিয়ের সময় কন্যাকে দেয়া গহনা ও আসবাবপত্র বিক্রি করেন নাসির। বিষয়টি নিয়ে এলাকার চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ বহুবার সালিস মিমাংসা করে দেন। চাঁদশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কৃঞ্চ কান্ত দে, নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, একাধিকবার মিমাংসা করা হয়েছে।
নির্যাতিতা মর্জিনা আক্তার জানান, গত শনিবার স্বামী নাসির উদ্দিন বাবার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার আনার জন্য বলেন । টাকা আনতে অস্বীকার করায় স্বামী নাসির হাওলাদার(৩৩), ভাসুর নজরুল ইসলাম (৫০) ও জা হেলেনা আক্তার(৪৫) তাকে বেদমভাবে মারধর করে এক পর্যায়ে দরজার ঢাসা দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে মূমূর্ষ অবস্থার বাড়ির কলাবাগানে ফেলে রাখেন।
ঘটনার পত্যক্ষদর্শী চাঁদশী গ্রামের রাজু হোসেন (৪৫), কাওছার হোসেন (৩০) জানান, তারা নির্যাতিতার পিতা আব্দুর রহমান শাহকে মোবাইলে জানালে নির্যাতিতা মর্জিনার বাবা ও বড় ভাই সোহেল ঘটনাস্থলে পৌছে তাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। গত ৪দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে মর্জিনা। মেডিকেল অফিসার ডা. সেকেন্দার আলী জানান, রোগীর মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় আঘাতজনিত কারনে রোগীর অবস্থা খারাপ তবে বর্তমানে শংকামুক্ত।
অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে স্বামীর নাসির উদ্দিন কোন কথা বলতে রাজি হননি। ভাসুর নজরুল ইসলাম বলেন, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর অভিযোগ সত্য কিন্তু আমার আমি ও আমার স্ত্রীকে উদ্ধেশ্যেমূলক আসামি করা হয়েছে। নির্যাতনের সঙ্গে আমরা জড়িত নই।
এ ঘটনায় নির্যাতিততার পিতা আব্দুর রহমান শাহ বাদি হয়ে জামাতা নাসির হালাদার, তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম, স্ত্রী হেলেনা আক্তারকে আসামি করে নারী নির্যাতন ট্রাইবুনালে গত সোমবার গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গৌরনদী মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, প্রধান আসামি নাসির হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে গতকাল জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।