গৌরনদী
২০টি মটরসাইকেলে ভাঙচুর-আগুন, ২টি বাড়ি ভাঙচুর লুট, আহত-৪০ ॥ গৌরনদীতে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম ঃ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নে কুরিরচর গ্রামে বিএনপির দলীয় মনোনীত ধানের শীষের প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে গতকাল রবিবার সকালে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ যুবলীগের শতাধিক নেতা কর্মিরা। হামলাকারীরা ফিরে আসার সময় গ্রামবাসী জড়ো হয়ে শহ¯্রাধিক নারী পুরুষ লাঠিসোটা নিয়ে পাল্টা হামলা চালায় গ্রামবাসী ও বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকরা। এসময় গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৩০টি মটর সাইকেল ভাঙচুর করে ২০টি মটর সাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। হামলায় ২টি বাড়ি ভাঙচুরসহ উভয় দলের প্রায় কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। খড়ের কুড়ে আগুন দিয়ে ও কয়েকটি বোমার বিস্ফোরন ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। গুরুতর আহত ৬ ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেভর্তি করা হয়েছে। বিএনপির সমর্থকরা পালিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় সরিকল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ফারুক মোল্লার সমর্থনে গৌরনদী উপজেলা, কলেজ ও পৌর ছাত্রলীগ যুবলীগের ও সরিকল ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক নেতা কর্মি শতাধিক মটরসাইকেল মহড়া নিয়ে সরিকলের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিন করে নলগোড়া বাজার-–কুরিরচর সড়ক হয়ে সরিকল ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীর নিজ বাড়ি কুরিরচর গ্রামে যান। এসময় কয়েকজন উশৃংখল যুবক নৌকার সমর্থকরা প্রার্থীর বাড়ির সামনে টাঙানো একটি ব্যানার ছিরে ফেললে বাড়ির ভিতর থেকে মহিলারা প্রতিবাদ করে গালিগালাজ শুরু করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কুরিরচর গ্রামের নোয়াব আলী হাওলাদার(৪৫),রাবেয়া বেগম (৩৮), সেনো আরা (৫০) ও নিজাম সরদার(৪০) জানান, গালিগালাজের এক পর্যায়ে মটরসাইকেল মহড়ায় থাকা যুবলীগ ছাত্রীগ নেতা কর্মিরা বিএনপির প্রার্থীর বাড়ির মধ্যে ঢুকে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে লণুটপাট চালায়। এসময় হামলাকারীরা প্রার্থী মঞ্জুর হোসেনের স্ত্রী খালেদা পারভীন, ভাগ্নী রুবনা আকতার, ভাতিজী সাথী আকতার, মিলনের চাচাতো ভাই নুর জামাল ও মঞ্জুর সমর্থক হালিম সরদার(২৮)সেকেন্দার সরদার (৬০) ফাতেমা বেগম (৪৮)১২/১৫ জনকে আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন এসময় পাশ্ববর্তি মিয়ার চর গ্রামে গণসংযোগ করছিলেন। মোবাইল ফোনে বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে বাড়ির সন্নিকটে এসে হ্যা- মাইক দিয়ে গ্রামবাসী ও তার সমর্থকদের প্রতিহত করার আহবান জানান। মুহুর্তের মধ্যে শহ¯্রাধিক নারী পুরুষ লাঠিসোটা ও দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন বাড়ি থেকে ২/৩ শত গজ দুরে মহড়ায় আসা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মিদের উপর পাল্টা হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মিরা অনেকেই মটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে পালিয়ে আত্ম রক্ষা করেন। এসময় বিক্ষব্ধ গ্রামবাসী ও প্রার্থী মঞ্জুর সমর্থকরা ৩০টি মটর সাইকেল ভাঙচুর করে ২০টি আগুন দিয়ে সম্পূর্ন ভস্মিভূত করে পোড়া অংশ ধলু মিয়ার বাড়ির সামনের ডোবায় ফেলে দেয়। প্রার্থী মঞ্জুর হোসেনের স্ত্রী খালেদা পারভীন অভিযোগ করেন, ৫০/৬০ জন শসস্ত্র যুবলীগ – ছাত্রলীগ নেতা কর্মিরা অতর্কিতভাবে ঘরের মধ্যে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটাপাট শুরু করে। বাধা দিতে গেলে ঘরে থাকা ১০ আত্মীয় ও নারী সমর্থকদের মারধর ও পিটিয়ে আহত করেছে।র্
গ্রামের আয়নাল হোসেন, ফজিলতুন্নেছা, সরিফা বেগেমসহ অনেকেই জানান, হামলা শুরু হলে গোটা গ্রামেআতংক ছড়িয়ে পরে। প্রান ভয়ে নারী পুরুষ দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।
গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জোবায়েরুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা কতিপয় নেতাকর্মিরা আমাদের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে গনসংযোগ করতে গেলে দুপুর ১২টায় বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুর হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় তিন হাজার সমর্থক ও সর্বহারা সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে হামলা চালায় । তারা অভিযোগ করেন সন্ত্রাসীরা ধারাল অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের প্রায় ২০ নেতাকর্মিকে রক্তাক্ত জখম করেছে। এসময় সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত ভিপি সুমন মাহমুদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সদস্য পৌর কাউন্সীলর আতিকুর রহমান, উপজেলা যুবলীগ সদস্য এমদাত হোসেন মৃধা, জুয়েল মৃধা, নলচিড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ সম্পাদক নয়ন আকন, রুবেল মিয়া, নাজমুল, জহির খান, নাসিরউদ্দিন, পৌর ছাত্রলীগের সদস্য সাদ্দাম হাওলাদার, কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য জানে অলম, সরিকল ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মি আরিফ হোসেনসহ ২০/২৫ আহত হন। হামলা পাল্টা হামলায় উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়। মঞ্জুর সমর্থকরা ভয়ে আত্মগোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যুবলীগ ছাত্রলীগ ১০ নেতাকর্মিকে সরিকল ইউনিয়ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেভর্তি করা হয়েছে।
নৌকা মার্কার প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মো. ফারুক মোল্লা অভিযোগ করেন, ধানের শীষের প্রার্থী মঞ্জুর হোসেন উস্কানী দিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে এবং আমার সমর্থনে অংশ নেওয়া নেতাকর্মিদের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে। দুপুর২টায় বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. আকতারুজ্জামান ঘটনাস্থলে পৌছে র্যাব অতিরিক্ত পুলিশ জড়ো করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ র্যাব ও সাদা পোষাকের পুলিশ মোতায়ের করা হয়েছে। ওসি জানান, মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।