গৌরনদী
আগৈলঝাড়ায় বাবাকে হত্যার অভিযোগে তিন পুত্রের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ফুলশ্রী গ্রামের আব্দুল মালেক হাওলাদারকে হত্যার অভিযোগ এনে তিন শ্যালককে আসামি করে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছে দুলা ভাই মোঃ আসাদুল হক (৫২)। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে হত্যা মামলা রুজু করার জন্য আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত সোমবার তিন শ্যালক ও তাদের স্ত্রীসহ ৭ জনকে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ময়না তদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তা।
স্থানীয় লোকজন ও গ্রামবাসি জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ফুলশ্রী গ্রামের আব্দুল মালেক হাওলাদার (৯২ )অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিল। মালেক হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে লাইলী পারভীন (৫০) বাবা মায়ের অমতে একই গ্রামের আইয়ুব আলী পাইকের ছেলে মোঃ আসাদুল হককে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করেন। মামলার বাদি আগৈলঝাড়া উপজেলার ফুলশ্রী গ্রামের মোঃ আসাদুল হক এজাহারে উল্লেখ্য করে বলেন, আমার শ্বশুর মালেক হাওলাদার ও শ্বশুড়ি জাহানারা বেগম ছেলে মাসুদ হাওলাদার (৪৮), লিটন হাওলাদার (৪৫), রিপন হাওলাদারের (৪২) সঙ্গে বসবাস করতেন। আমার তিন শ্যালকসহ তাদের স্ত্রীরা আমার শ্বশুর মালেক হাওলাদারকে ফুসলিয়ে বোন লাইলীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি তিন ভাই নিজেদের নামে লিখে নেন। আমার শ্বাশুড়ি এর প্রতিবাদ করলে আমার শ্যালক ও তাদের স্ত্রীরা মানুষিক অত্যাচারের ফলে আমার শ্বাশুড়ি জাহানারা বেগম ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি হার্ট ফেল করে মারা যান। সম্প্রতি সময়ে আমার শ্বশুর মালেক হাওলাদার নিজের ভূল বুঝতে পেরে মেয়ের নামে কিছু সম্পত্তি দেয়ার জন্য তিন ছেলের উপর চাপ সৃষ্টি করলে তিন ছেলে ও তাদের স্ত্রীরা সম্পত্তি ফেরত দিতে তালবাহানা শুরু করে। গত ৭ মার্চ এ নিয়ে আমার শ্বশুরের সঙ্গে তার তিন ছেলে ঝগড়া বিবাদ হয়। এক পর্যায়ে আমার শ্বশুর আদালতের মাধ্যমে ছেলেদের কাছ থেকে সম্পত্তি ফেরত নেয়ার কথা বলে তিন ছেলেকে হুমকি দেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, শ্বশুর মালেক হাওলাদারকে আসামিরা গত ৯ মার্চ রাত দেড়টা থেকে ৫টার মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বসরোধ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে কান্নার অভিনয় করে এবং স্বজনদের ন জানিয়ে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় মালেক হাওলাদারের জামাতা মোঃ আসাদুল হক বাদি হয়ে বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত ১৫ মার্চ তিন পুত্র, তাদের স্ত্রী, ছেলেসহ সাত জনকে আসামী করে হত্যার নালিশী মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে হত্যা মামলা রুজু করার জন্য আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ছরোয়ার জানান, আদালতের নির্দেশে গত সোমবার মৃত মালেক হাওলাদারের ছেলে মাসুদ হাওলাদার (৪৮), লিটন হাওলাদার (৪৫), রিপন হাওলাদার (৪২) তাদের তিন স্ত্রী পুত্রসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে মাসুদ হাওলাদার, লিটন হাওলাদার ও রিপন হাওলাদার বলেন, মামলার বাদী আসাদুজ্জামান সম্পত্তির লোভে ১৯৮৮সালে আমার বোনকে অপহরণ করে বিয়ে করে। সেই থেকে আমার বাবা বোনের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বাবা বহু পূর্বে তার সকল সম্পত্তি আমাদের ভাইদের নামে লিখে দেন। সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে আসাদুল হক আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। বাধ্যর্কজনিত কারনে স্বাভাবিকভাবে বাবার মৃত্যু হয়েছে। ফুসলিয়ে কিংবা জোরপূর্বক সম্পত্তি লিখে নেয়ার অভিযোগ সত্য নয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, আব্দুল মালেক হাওলাদারের তিন পুত্র এক কন্যা থাকা সত্বেও পরিবারের অমতে একমাত্র মেয়ে লাইলী পারভীন বাদিকে বিয়ে করায় জীবদ্দশায় তিনি (মালেক) তার তিন ছেলের নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা নির্ধারনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাবার পরেই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল রব হাওলাদার গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।