গৌরনদী
গৌরনদীর মেধাবী ছাত্রী কবিতা হত্যা, আসামিরা কি নিরাপদে
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী কবিতা আক্তার হত্যার ৪ বছর ৯ মাস পেরিয়ে গেলে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদিকে হুমকিসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংক উৎকোচ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামির পক্ষপাত অবলম্বন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মামলার বাদি বরিশাল বরিশাল পুলিম সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।
এজাহার, বাদির অভিযোগ, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা জানা গেছে, গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী মহল্লার মোঃ আইনুল হকের কন্যা ও উপজেলার টরকী বন্দর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী কবিতা আক্তারকে (১৪) একই উপজেলার ধানডোবা গ্রামের লাল মিয়া চকিদারের পুত্র আজাদ হোসেন ওরফে কালু চকিদার (২৫) উত্যক্ত করে আসছিল। কালু চকিদারের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় সে তার সন্ত্রাসী সহযোগীদের নিয়ে একাধিকবার কবিতাকে অপহরনের হুমকি দেয়। পরবর্তিতে আজাদ হোসেন ওরফে কালু স্কুল ছাত্রী কবিতাকে একাধিকবার অপহরনের চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হন। এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়। ওই দিন রাতে কবিতা নিঁখোজ হন। পরবর্তিতে ২ ফেব্রæয়ারি পুলিশ সুন্দরদী মহল্লার রাজু ঘরামীর বাড়ির পাশে একটি ডোবা থেকে কবিতার লাশ উদ্ধার করে। সুরাত হাল রিপোর্টে বলা হয়, লাশের পেটের সঙ্গে সিল পাটা রসি দিয়ে বাঁধা ছিল এবং গলায় পেলাষ্ট্রিকের সুতলী দিয়ে পেচানো ছিল। তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২ ফ্রেবুয়ারি নিহত কবিতার বাবা বাদি হয়ে আজাদ হোসেন কালুকে প্রধান আসামিসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল তদন্তের জন্য বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেয়া হয়।
কবিতার বাবা অভিযোগ করে বলেন, বখাটে আজাদ হোসেন ওরফে কালু দলবল নিয়ে মেয়ে কবিতাকে অপহরন করে নিয়ে ধর্ষনের পর হত্যা করে লাশের বুকের সঙ্গে সিল পাটা বেধে পানিয়ে ডুবিয়ে লাশ গোপন করার চেষ্টা করেছিল। কালু ও তার সন্ত্রাসী সহযোগীরা আমার মেয়েকে অপহরন করে হত্যা করেছে। প্রায় ৫ বছরেও মামলার অভিযোগপত্র না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে আসামিদের রক্ষায় চেষ্টা করছে। যে কারনে গত ৫ বছরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলা তদন্তের নামে আমাকে হয়রানী করেছে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে।
মামলার শুরু থেকে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও ডিবি পুলিশ আসামি ধরেনি। আমি আসামি ধরে দেওয়ার পরেও আসামির রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেনি। ২০১৭ সালের ৯ আগষ্ট ডিবি পুলিশ এক আসামিকে ধরতে আমাকে কালকিনি নিয়ে যান। সেখানে আমি অসামি ধরার পরে ডিপি পুলিশ পিছন থেকে সটকে পরে। পরে এলাকাবাসি ও আসামির স্বজনরা আমাকে আটকে মারধর করে কালকিনি থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে এবং কালকিনি থানায় আমার বিরুদ্ধে অপহরনের চেষ্টার মামলা দায়ের করেছে। ওই বছর ডিসেম্বরে ডিবি পুলিশ আসামি ধরার কথা বলে আমাদের সিলেট পাঠায় কিন্তু আমরা সিলেট যাওয়ার পরে সেখানে তারা যায়নি। সিলেট পাঠিয়ে আমাকে হয়রানী করা হয়েছে। পরবর্তিতে ২০১৮ সালে ১নং আসামি ধরতে বললে তাকে না ধরে আসামিকে পুলিশ বিদেশে যেতে সহায়তা করেছে। মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে ভয়ভীতি দেখান এবং বলে মামলা ছেড়ে দেন নতুনা আবেদন করে অন্য কোন বিভাগে তদন্তর জন্য নিয়ে যান। সে আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে চাপ দেন। তিনি (তদন্তকারী কর্মকর্তা) আরো বলেন, তোমাকে (বাদি) ও তোমার স্ত্রীকে পেটানো দরকার। আমি হুমকির মুখে আতংকে আছি। আমার মেয়ে হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে উর্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ চাই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, বাদির অভিযোগগুলো অনেকটাই সত্য। বাদির অভিযোগুলোর কথা আমাকে বলেছে। আমার আগে একাধিক কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেছে তার দায় দায়িত্ব আমার নয়। আমি করোনাকালীন সময়ে তদন্তর দায়িত্ব পেয়েছি তার মধ্যে তদন্ত কাজ করা যায়নি। করোনা শিথিল হওয়ার পরে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি আশা করি খুব শীঘ্রই রহস্য উদঘাটনসহ অভিযোগপত্র জমা দেয়া হবে। আমার বিরুদ্ধে বাদির কোন অভিযোগ নাই।