গৌরনদী
তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রীর অত্মহত্যা! এবার সৎ মা ও বাবার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের, শিক্ষক চাকুরিচ্যুত
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে নোহা বুধবার আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় ওই দিন ছাত্রীর বাবা মোঃ সুমন মিয়া বাদি হয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলামকে (২৭) আসামি করে আত্মহত্যা প্ররোচনায় অভিযোগে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে মৃত নুসরাত জাহানের জন্মদাতা মা তানিয়া আক্তার বাদি হয়ে সোমবার বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আমলী আদালতে নুসরাতের সৎ মা ঝুমর বেগম ও বাবা মোঃ সুমন মিয়াসহ ৪জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বলা হয়, আসামিরা নুসরাতকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার প্রচারনা চালিয়েছে। এদিকে গত রোববার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির জরুরী সভায় সহকারী শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলামকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে।
বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেড আমলী আদালতের পেশকার জানান, গতকাল সোমবার আগৈলঝাড়া উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের তানিয়া আক্তার (৩০) বাদি হয়ে একই গ্রামের আব্দুর রহিম মিয়ার ছেলে মোঃ সুমন মিয়া (৩৫) ও তার ৪র্থ স্ত্রী ঝুমুর বেগম (২৬)সহ ৪জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক শাম্মী আক্তার আমলাটি আমলে নিয়ে আগৈলঝাড়া থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার প্রতিবেদন আসা সাপেক্ষে আদেশের দিন ধার্য্য করার নির্দেশ দেন। মামলার বাদি মৃত ছাত্রীর মা তানিয়া আক্তার অভিযোগ এজাহারে বলেন, অমার সাবেক শ্বশুর আব্দুর রহিম তার সকল সম্পত্তি নুসরাত জাহানের নামে লিখে দিবে শুনে সম্পত্তি হারানোর ভয়ে আমার মেয়ে নুসরাতকে তার সৎ মা ঝুমুর বেগম ও বাবা সুমন মিয়া পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে নিজেরাই লাশ নিয়ে আত্মহত্যার প্রচারনা চালায়। এটি আত্মহত্যার কোন ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড। আমি ঢাকা থেকে এসে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা করবো টের পেয়ে প্রকৃত খুনি সৎ মা ঝুমুরকে বাঁচাতে তার সহযোগী নুসরাতের বাবা সুমন মিয়া তরিঘড়ি করে ঘটনার দিন রাতেই থানায় মামলা করেছে। সুমন মিয়ার দায়ের করা মামলা প্রকৃত খুনিকে রক্ষায় রহস্যজনক মামলা।
খাজুরিয়া দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর পরিচালনা কমিটির এক জরুরী সভা রোববার বিকেলে কমিটির সভাপতি ও বাগধা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠি হয়। সভায় সরকারি ও কমিটির সিদ্বান্ত অমান্য করে মহামারি করোনার মধ্যে পাঠদান ও সাময়িক পরীক্ষা নেওয়ায় শিক।সকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্বান্তে হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ায় সহকারী শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলামকে চাকুরীচ্রুত করা হয়েছে।
আদালতে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুমন মিয়া তানিয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত নই। তিনি হত্যার জন্য শিক্ষক সফিকুলকে দায়ী করে বলেন, আসামির প্রভাবশালী লোকজন ও স্বজনরা আমার কাছে মিমাংসার প্রস্তাব দেয় । আমি তাতে রাজি না হওয়ায় মহল বিশেষ বিষয়টি নিয়ে ষরযন্ত্র করছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুমন মিয়ার ৪র্থ স্ত্রী নুসরাতের সৎ মা হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিহিংসা থেকে আমাকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মামলার এজাহারভূক্ত আসামি শিক্ষক সফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ মাথায় রেখেই মামলার তদন্ত চলছে। এজাহারভূক্ত আসামি শিক্ষক সফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। বরিশাল পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ও গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার স্কুল ছাত্রীর বাবার সঙ্গে কথা বলেন, সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত খুনিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
বুধবার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রী নুসরাত জাহান ওরফে নোহার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বাবা সুমন মিয়া বাদি হয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলামকে (২৭) আসামি করে আত্মহত্যা প্ররোচনায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদি সুমন মিয়া মামলায় উল্লেখ করেন, মেয়ে সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করে এতে শিক্ষক গালিগালাজ ও মারধর করায় করায় অপমানে আত্মহত্যা করেছে।