প্রধান সংবাদ
উজিরপুরে ইউপি চেয়ারম্যান ও ভাতিজার বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য কাজী হুমায়ুন কবির ও তার ভাতিজা লিটু কাজীর বিরুদ্ধে উজিরপুরের সন্ধ্যা নদীর ধামুরা বন্দর এলাকায় নদী, ব্যক্তিমালিকানা ও ভূমিহীন মাঝে বরদ্ধকৃত খাসজ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নুরুল হক হাওলাদার বাদি হয়ে চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজাকে আসামি করে রোববার বরিশাল অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা মামলা দায়ের করেছে ।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজন, ভূমিহীন পরিবার, উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজিরপুরের সন্ধ্যা নদীর ধামুরা বন্দর এলাকায় স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী অবৈধভাবে নদী দখল করে স্থাপনাসহ বসত বাড়ি নির্মান করলে এবারে সয়ং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সন্ধ্যা নদী, ব্যক্তি মালিকানা ও ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্ধকৃত জমি জবর দখল করে বালু ভরাট ও বহুতল ভীত দিয়ে পাক ভবন নির্মান শুরু করেছে। ভূক্তভোগী ধামুরা গ্রামের নুরুল হক হাওলাদার (৫৮) মোজাম্মেল হক ভান্ডারী (৭০), মাসুদ হাওলাদার (৫৫), গঞ্জর আলি হাওলাদার (৬৫) অভিযোগ করে বলেন, সন্ধ্যা নদী সংলগ্ন ধামুরা মৌজায় এস.এ ৪৪২ নং খতিয়ানের, এস.এ ২৬৬৭,২৬৭০ নং দাগে ৭ শতাংশ জমি পৈত্রিক সূত্রে রেকর্ডিয় আমরা । প্রায় ৪০/৫০ বছর ধরে আমরা ওই জমি ভোগ দখল করে আসছি। কিন্তু অতি সম্প্রতি হঠাৎ উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য কাজী হুমায়ুন কবীর (৫৬) ও তার ভাতিজা কাজী লিটু (৪৫) আমাদের পৈত্রিক ৭ শতাংশ জমি, নদীর জমি প্রায় ১৭ শতাংশ ও ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্ধকৃত প্রায় ৬ শতাংশ জমি দখল করে বালু ভরাট করে তাতে বহুতল ভীত দিয়ে পাকা স্থাপনা নির্মান শুরু করেছে। স্থানীয় বিল্লাল হোসেন (৬৩), বাবুল হাওলাদার (৫০) ও ফজুলল হক হাওলাদার (৩৮) অভিযোগ করে বলেন, বিগত দিনে ধামুরা এলাকার প্রভাবশালী লোকজন সন্ধ্য নদী দখল করে পাকা ভবন নির্মান করে আসলেও এবারে খোদ ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজা নদী দখল করে বালু ভরাট করেছে এবং তাতে পাকা ভবন নির্মান করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুইজন ভুমিহীন অভিযোগ করেন, নদী সংলগ্ন খাস জমি আমাদের নামে সরকার বরাদ্ধ দেয় কিন্তু চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজা তা জবর দখল করে ভরাট ও ভবন নির্মান করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উজিরপুরের সন্ধ্যা নদীর ধামুরা বন্দরের দক্ষিন-পশ্চিম পাশে নদীর মধ্যে প্রায় দেড়শত ফুট লম্বা জায়গা পেলাসাংডিং করে তার মধ্যে বালু ভরাট করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান কবির কাজী ভরাটকৃত জমি এখনো খালি রয়েছে। তার ভাতিজা লিটু তার জমিতে বহুতল বিশিষ্ট ভীত দিয়ে পাকা নির্মান কাজ শুরু করেছে। এ সময় খালেদ মামুন (২৩), সাগর হাওলাদার (২৮), সোহাগ হাওলাদার (৩০),সোনিয়া আক্তার (২০), রওশন আরা (৫০), হাসিনা বেগম (৪৫)সহ অনেকই অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও তার ভাতিজা অবৈধ খাল করার সঙ্গে আমাদের রেকর্ডিয় জমি দখল করে নেয়। শুধু তাই জনস্বার্থে নদ তে পাকা ঘাটলা নির্মান করা হয় তাও ভেঙ্গে নদীতে মিশিয়ে দিয়েছে। আমরা বাধা দিলে সে আমাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে। চেয়ারম্যান কাজী হুমায়ুন কবির ও তার ভাতিজা লিটু কাজী ২০/২৫ জন ভারাটে সন্ত্রাসী নিয়ে প্রকাশ্যে দেশীয় ধারালো অস্ত্র,রাম দা,চাপাতি, লোহার রড হাতে নিয়ে মহড়া দিয়ে আমাদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করছে।
উজিরপুর উপজেলা ও শোলক ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক বালু ভরাট করে দখলকৃত জমির অধিকাংশ নদী ও সরকারি খাসজমি। দখলদার লিটু কাজীর কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি। শোলক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ কাজী হুমায়ুন কবির ব্যক্তি মালিকানা নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকার খাস জমি ভ‚মিহীনদের মধ্যে বরাদ্ধ দেয়। ভূমিহীনরা ওই জমি দুই দফা বিক্রি করে। শোলক গ্রামের ভুমিহীন রহিম শরীফসহ তিন জনের কাছ থেকে আমি ২০১৭ সালে সাব-কবলা দলিলমূলে উক্ত জমি আমি ক্রয় করে ভোগদখল করছি। উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) জয়দেব চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ভ‚মিহীনদের সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া জমি ক্রয়বিক্রয় আইন সম্মত নয়, ওই জমিতে পাকা ভবন নির্মান কিংবা জমির আকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তাছাড়া সরকারি খাল-নদী দখল করে ভরাট করা সম্পুর্ণ বেআইনী ও অবৈধ। দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।