গৌরনদী
ফেল করার শিক্ষকের গালমন্দ, তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রীর আত্মহত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক,বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে করোনার মধ্যে পাঠদান ও পরীক্ষা নেন কর্তৃৃপক্ষ। পরীক্ষায় ফেল করায় তৃতীয় শ্রেনির এক ছাত্রীকে শিক্ষক কর্তৃক গালমন্দ ও মারধর করায় অভিমানী ছাত্রী বুধবার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই ছাত্রীর বাবা মোঃ সুমন মিয়া বাদি হয়ে সহকারী শিক্ষককে আসামি করে আগৈলঝাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
গ্রামবাসি, শিক্ষক, অভিভাবক ও পুলিশ জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমী করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পাঠদান বন্ধ ছিল। গত দুই সপ্তাহে পূর্বে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করেনার মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করে এবং ৫ সেপ্টেম্বর সাময়িক পরীক্ষা নেন।
খাজুরিয়া গ্রামের কয়েকজন অভিভাবক জানান, মহামারী করেনায় প্রায় ৬ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বাড়িতে ভাল পড়ালেখা না করায় অনেকেই পরীক্ষায় অনেকেই ফেল করেছে। ফেল করায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল শিক্ষকরা গালাগাল করে ও মারধর করছে। শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীদের মারধর করার বিষয়টি অনেক শিক্ষার্থী বাড়িতে গিয়ে বাবা মাকে জানান। খাজুরিয়া গ্রামের মোঃ সুমন মিয়া (৩৫) অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে নুসরাত জাহান (৯) দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীতে পড়াশোনা করে। মহামারি করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে তেমন পড়াশোনা করেনি। স্কুল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে স্কুল খুলে এবং সাময়িক পরীক্ষা নেন। পরীক্ষা আমার মেয়ে ফেল করায় গত বুধবার পাঠকক্ষে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলাম (২৭) বুধবার ক্লাসে খারাপ ভাষায় মেয়েকে গালিগালাজ করে এবং বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে। স্কুল ছুটির পরে মেয়ে বাড়িতে কান্নাকাটি করে গালাগাল ও মারধরের কথা জানান। এ সময় আমরা বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাতে খাবার খাইয়ে ঘুমাতে পাঠাই। কিন্তু মেয়ে অপমান সহ্য করতে না পেরে রাত পোনে ১২ টার দিকে শোয়ার ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যা করেছে। মৃত স্কুল ছাত্রীর মা তানিয়া আক্তার (৩০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, স্যারেরা কি করল? আমার মা বেঁচে থাকলে কাজ করে খেত কিন্তু আমার বুকের ধন বুকে থাকত। নিষ্ঠুর শিক্ষক আমার মাকে মেরে ফেললো। আমি এর বিচার চাই।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গালাগাল ও মারধরের কথা অস্বীকার করে দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর সহকারী শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, মারধর নয় ফেল করার বিষয়টি বুঝিয়ে তাকে মৃদু শাসন করা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নয়ন তালুকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত দেওয়া সম্পূর্ন নিষেধ থাকা সত্বেও কেন মারধর করা হল বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় বুধবারা গভীর রাতে স্কুল ছাত্রীর বাবা মোঃ সুমন মিয়া বাদি হয়ে দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমীর সহকারী শিক্ষক মোঃ সফিকুল ইসলামকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠিয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।