বরিশাল
আগৈলঝাড়ায় করোনা ভয়ে শিশুকে শিকলে বেঁধে রেখেছে মা
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রত্যন্ত পল্লি এলাকায় করোনার বিস্তার ঘটায় চারিদিকে শুধু ভয় আর ভয়, বাবা মা চান বুকের ধন সন্তানকে বুকে আগলে রাখতে। তাইতো করোনার সংক্রমন থেকে বাঁচাতে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লি রাংতা গ্রামে করোনার হাত থেকে বাঁচাতে দুরন্তপনা শিশুকে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে মা।বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিশুটিকে শুক্রবার রাতে শিকল মুক্ত হয়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের হতদরিদ্র আব্দুর রশিদ হাওলাদার (৫২), শেফালী বেগমের (৪০) দুই ছেলে গোলাম রাব্বী (১০)ও গোলাম মাহতাবকে (৫) নিয়ে তাদের সংসার। বড় ছেলে গোলাম রাব্বী পাশ্ববর্তি গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন চাঁদশী মাজিদিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র।রাব্বীর বাবা আব্দুর রশিদ জানান, তার অভাবের সংসার । স্থানীয় রাংতা বাজারে চায়ের দোকান দিয়ে পরিবার নিয়ে কোন রকমে সংসার চলছিল। করোনার কারনে তেমন বেচাকেনা হয় না। তাই দুই সন্তনসহ চরজনের সংসার চলছে অর্থহারে অনাহারে । বড় ছেলের মাদ্রাসা বন্ধ হওয়ায় বাড়িতেই থাকে। তাই বাড়তি আয়ের জন স্ত্রী শেফালী বেগম বাড়ির পাশে গৌরনদী- রাজিহার সড়কের রাংতা ব্রীজের পাশে ছোট একটি দোকান দিয়ে বসেন। স্ত্রী শেফালী দোকান চালানোর কারনে তাকে দোকানে থাকতে হয়। এই সুযোগে বড় ছেলে গোলাম রাব্বী দুরন্তপনায় মেতে উঠে। ঘর ছেরে বাইরে গিয়ে গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। এতে ছেলেকে নিয়ে তারা করেনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে থাকেন। তিনি (আব্দুর রশিদ) বলেন, দুই ছেলেকে নিয়ে মোগো অনেক স্বপ্ন। ছেলেরা লেহাপড়া কইরা মানুষের মত মানুষ অইবো। মোগো কষ্ট ঘুচাবে। তয় চারিদিকে যে রহম কারোনা দেখা দিয়েছে এতে ওগো নিয়ে ভয় হয়।
মা শেফালী বেগম বলেন, মোরা দোকানে গেলেই ও (রাব্বানী) বাড়ি ছেড়ে ঘোড়তে বাইর অয়। সারা দিন কোথায় কোথায় থাহে জানি না। সন্ধ্যয় অইয়া গেলেও বাড়িতে আহে না।এইয়ার লাইগ্যা বুধবার ওরে গালাগালি করি। রাগ কইররা বিশিতবার (বৃহস্পতিবার)বেইন্নকালা গেছে আর রাইতে বাড়িতে আইছে। ও যদি করোনায় আক্রান্ত হয় হেলে মুই কি করমু, কই জামু, কি দিয়া ডাক্তার দেহামু। করোনা দিয়া বাঁচাতে হেইয়ার লাইগ্যা দোকানে লগে শিকল দিয়া বাইন্ধা রাখছি।ওরে বাঁচাতে ভালর লাইগ্যাই এই কাম করছি। আগৈলঝাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সুশান্ত বালা এ প্রসঙ্গে বলেন, মহামারী করোনার জন্য যে কোন বাবা মা সন্তানের নিরিপত্তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতেই পারে।তবে শিশু অধিকার আইন ২০১৩ ধারামতে কোন শিশুকে এ ভাবে শিকল দিয়ে বেধে রাখা চরম অপরাধ, এধরনের কাজ করা কোন বাবা মায়ের উচিৎ না। ঘটনাটি দুঃখ জনক বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠিয়ে শিশুর বাবা মাকে বুঝিয়ে শিশুটিকে শিকল মুক্ত করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে একজন হতদরিদ্র মা ছেলে শিশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজের বুঝমত এ কাজ করেছে। তাই আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে মানবিককতার কথা বুঝিয়ে সচেতন করা হয়েছে।