গৌরনদী
গৌরনদীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, নার্সসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
বরিশালের গৌরনেদী উপজেলা সদরের আনোয়ারা ক্লিনিকে প্রসূতির অস্ত্রপাচারে ভূল চিকিৎসায় আফরোজা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত¡া রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার নিহতের স্বামী মোঃ কুদ্দুস তালুকদার বাদি হয়ে ১০ জনকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এজাহারভূক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানান, উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের দত্তশ্বর গ্রামের হাসেম তালুকদারের ছেলে মোঃ কুদ্দুস তালুকদারের অন্তঃসত্ত¡া স্ত্রী আফরোজা আক্তারের (২৩) প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে বৃহস্পতিবার সকালে গৌরনদী উপজেলা সদরের আনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ওই দিন বিকেলে তাকে অস্ত্রপাচারের ওটিতে নেওয়া হয়। নিহতের স্বামী বাদি মোঃ কুদ্দুস তালুকদার (৩৮) অভিযোগ করে বলেন, ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ হেদায়েতুল্লাহ ও তার স্ত্রী গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স শামীমা ইয়াসমিন (৪৫) গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (সার্জন) ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ ভিতরে প্রবেশ করেন। এ সময় ওটিতে আফরোজাকে অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগ করেন। চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করার ২মিনিটের মধ্যে তার স্ত্রী আফরোজা মারা যান। গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (সার্জন) ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ ওটি থেকে বের হয়ে আমাকে জানান রোগী মারা গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পরলে রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালে হামলা করে চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে চিকিৎসকদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
গৌরনদী উপজেলা জলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (সার্জন) ডাঃ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আমরুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, অন্তঃসত্ত¡া নারী আফরোজা আক্তার নামের রোগীর সিজার করানোর জন্য আমি হাসপাতালের পরিচালক হেদায়েতুল্লাহ ও তার স্ত্রী গৌরনদী উপজেলা জলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স শামীমা ইয়াসমিন ওটিতে যাই। এ সময় হেদায়েতুল্লাহ নিজেই রোগীকে অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগ করেন। অতিরিক্ত চেতনানাশক প্রয়োগ ও বেশী উপরীভাগে পুশ করায় ২মিনিটের মধ্যে রোগী মারা যায়। রোগী মারা গেলে কৌশলে হেদায়েতুল্লাহ আমাদের ফেলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান। বিক্ষুব্ধরা আমাদের আটকে রাখলে পুলিশ খবর দিলে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের দুই পরিচালক স্বামী-স্ত্রী পলাতক রয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ হেদায়েতুল্লাহর মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। স্ত্রী শামীমা ইয়াসমিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (এনেসথিয়া বিশেষজ্ঞ) ডাঃ মাজেদুল হক কাওছার রোগীকে অতিরিক্ত মাত্রায় এনেসথিয়া প্রয়োগ করার সঙ্গে সঙ্গে রোগী মারা যান।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মোঃ কুদ্দুস তালুকদার বাদি হয়ে ডাঃ হেদায়েতুল্লাহ (৫০) তার স্ত্রী সিনিয়র নার্স শামীমা ইয়াসমিন (৪৫), ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী অজয় হালদার (২৫), নার্স সাহিদা বেগম (২২) ও সহকারী রিপন মিস্ত্রী (২১)র নাম উল্লেখ অজ্ঞাতনামা ৫জন সহ ১০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী অজয় হালদার ও সহকারী রিপন মিস্ত্রীকে (২১) গ্রেপ্তার করে গতকাল শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি।