বরিশাল
যৌতুকের দাবিতে উজিরপুরে গৃহবধূকে হত্যা, গৌরনদীতে স্ত্রীসহ ৪ জনকে জখম, মামলা দায়ের গ্রেপ্তার-১
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/
দাবিকৃত যৌতুক না পেয়ে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের উত্তর শোলক গ্রামে রোববার এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে স্বামী ও দেবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যৌতুকের দাবিকৃত দুই লাখ টাকা না পাওয়ায় একই দিন গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বার্থী গ্রামে গৃহবধূ ও তার পরিবারের ৪ জনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। উভয় ঘটনায় সোমবার উজিরপুর ও গৌরনদী মডের থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গৌরনদীর ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ ও এজাহারে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী গ্রামের আজাহার আলী হাওলাদারের কন্যা ঝুমুর বেগমের (৩০) পাশ্ববির্ত উজিরপুর উপজেলার উত্তর শোলক গ্রামের ওয়ারেছ হাওলাদারের ছেলে মজিবর হাওলাদারের (৪২) সঙ্গে ৫ বছর পূর্বে সামাজিভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী মজিবর স্ত্রী ঝুমুর বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক আনার জন্য চাপ দেয়। চাপ সৃষ্টি করে মজিবর বিভিন্ন সময় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। নিহত ঝুমুরের বাবা আজাহার আলী হাওলাদার (৫০) অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ব্যবসা করার জন্য মজিবর নতুন করে দুই লাখ টাকা আনার জন্য মেয়ে ঝুমুরকে বলে। ঝুমুর টাকা আনতে অস্বীকার করায় তাকে বেদমভাবে মারধর করা হয়। সর্বশেষ রোববার সকালে মজিবর টাকার জন্য ঝুমুরকে শারীরিকভাবে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে চিকিৎসা না দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। এক পর্যায়ে ঝুমুর মারা যায়। স্থানীয়রা বিষয়টি উজিরপুর থানাকে অবহিত করলে উজিরপুর মডেল থানা পুলিশ রোববার সন্ধ্যায় মজিবরের বসত ঘর থেকে লাশ উদ্ধার করে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে মজিবর হাওলাদারের মুঠোফোনে কল করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান বলেন, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মাসুদ হাওলঅদার (৩৫) বাদি হয়ে গতকাল সোমবার স্বামী মজিবরসহ পরিবারের ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
এদিকে গৌরনদী উপজেলার বার্থী গ্রামের আকবর হাওলাদারের ছেলে হারুন হাওলাদারের (৩২) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ শিকারমঙ্গল গ্রামের মজিবর রাঢ়ীর কন্যা সুমী আক্তারের (২৪) ৪ বছর পূর্বে সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ে জামাতাকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ ৫ লাখ টাকার যৌতুক দেয়া হয়। নির্যাতিতার বাবা মজিবর রারী অভিযোগ করে বলেন, জামাতা হারুন হাওলাদার নতুন করে ২ লাখ টাকা যৌতুক আনার জন্য মেয়ে সুমী আক্তারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে মেয়ে অস্বীকার করায় স্বামী হারুন প্রায়ই সুমীকে নির্যাতন করে। যৌতুক আনতে অস্বীকার করায় সর্বশেষ শনিবার রাতে সুমীকে স্বামী হারুন হাওলাদার বেদম মারধর করে অটকে রাখে। খবর পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রী হাসিনা বেগম, ছেলে ইয়াসিন রাঢ়ী রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামাতা হারুনের বাড়িতে এসে নির্যাতনের বিষয় জানতে চাই। এ সময় হারুন ও তার স্বজনরা হামলা চালিয়ে আমাদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এলাকার লোকজন ও আমার স্বজনরা মেয়েসহ আমাদের আহত ৪ জনকে উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
গৌরনদী মডেল থানা হাজতে গ্রেপ্তারকৃত হারুন হাওলাদারের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যৌতুক দাবির কথা সঠিন নয়। আর হামলা নয়, হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌরনদী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মোঃ আসাদুজ্জামান খান বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতিতার মামা হাফিজুর রহমান বাদি হয়ে নির্যাতিতার স্বামী হারুন হাওলাদার, ভাই ছালাম সরদার, শাহ্আলম সরদার, বক্তিয়ার পাওলান, আত্মীয় রিয়াদ সরদারকে আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ হারুন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।