প্রধান সংবাদ
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে উজিরপুরে দুই বিবাহ বন্ধ \ ২০ হাজার টাকা জড়িমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লি হারতা ইউনিয়নের পূর্ব হারতা গ্রামে বুধবার রাতে গ্রামের আঃ জলিল বেপারীর বাড়িতে ধুমধামে বিয়ের আয়োজন চলছিল। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়ির আঙ্গীনাসহ আশপাশ আলোকসজ্জায় সু-শজ্জিত করার পাশাপাশি অতিথি আপ্যায়নে ও রান্না বান্না শেষ করা হয়েছে। শুধুই বর যাত্রীর জন্য অপেক্ষা। এমনি সময় বিয়ে বাড়িতে হাজির হলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার করা হল কনে ও বরের বাবাকে। বন্ধ করে দেয়া হল বাল্য বিয়ে। একই দিন একইভাবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের গাজিরপাড় গ্রামে আরেকটি বাল্য বিবাহ বন্ধ করা হয়েছে।
উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মাহতাব উদ্দিন জানান, উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের পূর্ব হারতা গ্রামের আঃ জলিল বেপারীর মেয়ে ও আউয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী পপি খানম (১৪)র বিয়ে ঠিক হয় পাশ্ববর্তি বানরীপাড়া উপজেলার তালপ্রসাত গ্রামের মোহাম্মদ আলম সরদারের ছেলে নজরুল ইসলামের (২৬) সঙ্গে। বুধবার ৭০ জন বরযাত্রী নিয়ে বর আসেন কনের বাড়িতে।
স্থানীয়রা জানান, বাল্য বিয়ে বন্ধে তারা কনের বাবাকে নিষেধ করলেও তা না মেনে বিয়ের আয়োজন করে। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রনতি বিশ্বাসকে অবহিত করলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাল্য বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের খাবার স্থানীয়দের খাইয়ে দেন এবং কনের বাবা আঃ জলিল বেপারী ও বরের বাবা মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করে। পরে তাদের ২০ হাজার জড়িমানা করে মুচলেকা আদায় করে। কনে পপিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মোশারফ হোসেনের জিম্মায় দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত কনে ও বরের বাবা জড়িমানার টাকা পরিশোধ করে মুক্তি পান। ছাত্রী পপি খানম বলেন, বিয়ে বন্ধ করায় আমি স্যারদের কাছে কৃতজ্ঞ, আমি লেখাপড়া করে বড় হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের গাজিরপাড় গ্রামের আকবর আলী বেপারীর কিশোরী কন্যা ও গাজীরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনকারী মনি আক্তার (১৭) বিয়ে ঠিক হয় পাশ্ববর্তি হাসান বেপারীর ছেলে কাইয়ুম বেপারীর সঙ্গে। কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, বিয়ের খবর পেয়ে তারা কনের বাবার কাছে গিয়ে বাল্য বিয়ে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বিষয়টি বুঝিয়ে বিবাহ বন্ধের অনুরোধ করেন কিন্তু কনের বাবা অনুরোধ উপেক্ষা করে বিয়ের আয়োজন করেন। পরবর্তিতে তারা বিষয়টি উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রনতি বিশ্বাসকে অবহিত করেন। নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উজিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়দেব চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়দেব চক্রবর্তী জানান, তিনি উজিরপুর পৌর মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন ব্যাপারীসহ একদল পুলিশ নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে কনের বাবাকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করেন। আদালতে কনের বাবা অপরাধ স্বীকার করে। এ সময় কনের বাবার কাছ থেকে কনে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেন না মর্মে মুচলেকা আদায় করা হয়। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রনতি বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কোথায়ও কোন বাল্য বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যারা এ ধরনের উদ্যোগে নিবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।