গৌরনদী
মুঠোফোনের মিসকলে পরিচয় \ বিয়ের নামে প্রতারনা ৮দিন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বিদায়
নিজস্ব প্রতিবেদক, গৌরনদী২৪ ডটকম/ মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী ও মাদারীপুর জেল সদরে মিয়ারহাট গ্রামের জীবন বৈষ্ণব (৩০) পরিচয় দিয়ে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের দর্জিরপাড় গ্রামের শ্যামল মল্লিকের কন্যা ও বরিশাল বিএম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাথী মল্লিককে (২১) প্রায়ই ফোন করত এক যুবক। মুঠোফোনের মিস কলের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হওয়ার পরে পরবর্তিতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে । তরুনীর সঙ্গে প্রতারক যুবক জীবন বৈষ্ণব বিয়ের নামে প্রতারনা করে ৮দিন সংসার করার নামে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে পিটিয়ে জখম করে তাড়িয়ে দেন।
প্রতারিত কলেজ ছাত্রী সার্থী মল্লিক জানান, ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে একদিন তার মুঠোফোনে মিস কল আসে। সে ওই নম্বরে ফোন করলে জীবন নামে এক যুবক নিজেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও মাদারীপুর সদরের মিয়ারহাট গ্রামের কানাই বৈষ্ণবের ছেলে বলে পরিচয় দেন। মুঠোফোনের মিস কলের সূত্র ধরে পরিচয় হওয়ার পরে জীবন প্রায়ই ফোন দিয়ে কথা বলত। কিছুদিন পরে জীবনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। জীবন পরিচয়েই তাদের মধ্যে দুই বছর প্রেম হওয়ার পরে গত ১৭ জানুয়ারি জীবন বৈষ্ণব বিয়ের কথা বলে তাকে (সার্থীকে) মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার লক্ষীপুর যেতে বলে।
কলেজ ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, জীবন বৈষ্ণবের কথামত বিযের জন্য আমি তার কাছে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ার লক্ষীপুরে যাই। জীবন গত ১৯ জানুয়ারি আমাকে নিয়ে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে আমাকে বিয়ে করে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার লক্ষীপুরের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে স্বামী স্ত্রী হিসেবে অঅমার সঙ্গে শরীরিক সম্পর্ক গড়ে বসবাস করি। এরই মধ্যে আমার অনার্স তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হলে ২৮ জানুয়ারি আমি পরীক্ষার জন্য বরিশাল চলে আসি। ৩ ফেব্রæয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষা শেষ করে গত ৩ মার্চ স্বামী জীবনের কাছে আমি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার লক্ষাীপুরে চলে যাই। সেখানে পৌছলে জীবন আমাকে বাসায় ঢুকতে বাধা দেন এবং অমাকে চিনে না বলে স্ত্রীর সম্পর্ক অস্বীকার করেন। এ নিয়ে কলহের সৃষ্টি হলে জীবন বৈষ্ণব আমাকে মারধর করে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম করে তাড়িয়ে দেন। পরে আমি আমার জ্যাঠাতো ভাই রিপন মল্লিকের কাছে প্রতারক জীবন বৈষ্ণবের ছবি দিয়ে সব ঘটনা খুলে বললে জ্যাঠাতো ভাই রিপন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া গিয়ে খোজ খবর নিয়ে জানতে পারেন জীবন গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন কর্মকর্তা নয় এবং সে মাদারীপুর সদরের মিয়ারহাট গ্রামের জীবনও নয়। জীবনের প্রকৃত পরিচয় হল সে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাগপাড়া গ্রামের কানাই বৈষ্ণবের ছেলে কর্নধর বৈষ্ণব। প্রতারক জীবনের সঠিক পরিচয় উদঘাটনের পরে সে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার লক্ষীপুর থেকে পালিয়ে যায়। পরে আমি নিজ বাড়ি আগৈলঝাড়া উপজেলায় ফিরে কর্নধর বৈষ্ণবের বাড়ি গিয়ে কর্নধর বৈষ্ণবের বাবা-মা ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে সব জানিয়ে আমি স্বীকৃতি চাই। এ সময় কর্নধর বৈষ্ণবের পরিবার আমাকে গ্রহন না করে বসত ঘরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান। প্রতারক কর্নধর বৈষ্ণব প্রতারনা করে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি স্ত্রীর মর্যদা চাই। প্রতারকের বিচার চাই। তিনি (কলেজ ছাত্রী) আরও বলেন, মুঠোফোনে পরিচয়ে আমি যে ভুল করেছি এই ভুল আর যেন কোন মেয়ে না করে তার জন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে কর্নধর বৈষ্ণবের কাছে একাধিকবার ফোন দিলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্নধর বৈষ্ণবের বাবা কানাই বৈষ্ণব বলেন, ভূয়া পরিচয় দিয়ে প্রেম, বিয়ে পরবর্তিতে তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা আমি শুনেছি। ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে কর্নধর বৈষ্ণবের কোন খোজ নেই। তাকে খুজে বের করে সত্যতা যাচাইর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য রমেশ সরকার বলেন, কর্নধর বৈষ্ণবের অভিভাবকদের আগামি ২৩ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলেজ ছাত্রীকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, বিষয়টি শুনেছি এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।